বাংলা নববর্ষ উৎসব pohela boishakh

 বাংলা নববর্ষ উৎসব pohela boishakh

বাংলা সনের প্রথম মাসের নাম বৈশাখ। পহেলা বৈশাখে বাঙালির নববর্ষ উৎসব। নববর্ষ সকল দেশের সকল জাতির আনন্দ উৎসবের দিন।শুধু আনন্দ উচ্ছ্বাসে নয় সকল মানুষের জন্য কল্যাণ কামনার দিন। আমরা অনেক আনন্দ সুখ শান্তি কল্যাণ প্রত্যাশা নিয়ে মহা ধুমধাম এর সাথে নববর্ষ উদযাপন করি। একে অন্যকে বলি শুভ নববর্ষ



বাংলা নববর্ষ এখন আমাদের প্রধান জাতীয় উৎসব প্রতিবছরই বিপুল মানুষের অংশগ্রহণে আয়োজন হয় নববর্ষের মেলা। পাকিস্তান আমলে পূর্ব বাংলার বাঙালি কে এ উৎসব পালন করতে দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে, এটা পাকিস্তানি আদেশের পরিপন্থী। বাঙালি তার সংস্কৃতির উপর এ আঘাত সহ্য করেনি।বাঙালি জাতিসত্ত্বা গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে বাংলা নববর্ষ এবং তার উদযাপনের আয়োজন যুক্ত করা যায়।

১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলার যুক্তফ্রন্ট সরকারের শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক বাংলা নববর্ষের ছুটি ঘোষণা করেন এবং দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। এটি ছিল বাঙ্গালীদের তাৎপর্যপূর্ণ বিজয়ের দিন। ১৯৬৭ সাল থেকে রমনার বটমূলে ছায়ানোট নববর্ষের উৎসব শুরু হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বাধাহীন পরিবেশে এখন তা জনগণের বিপুল আগ্রহ উদ্দীপনাময় অংশগ্রহণে দেশের সর্ববৃহৎ জাতীয় অনুষ্ঠানের পরিণত হয়েছে। রাজধানী ঢাকার নববর্ষ উৎসবের দ্বিতীয় প্রধান আকর্ষণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাত্র-ছাত্রীদের বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। এই শোভাযাত্রায় মুখোশ, কার্টুন, বিভিন্ন ট্যাটু, রং আবির বিভিন্ন রকম চিত্র পরিলক্ষিত হয়।

বাংলা সন চালু হবার পর নববর্ষ উদযাপনে নানা আনুষ্ঠানিকতা যুক্ত হয়।নবাব এবং জমিদাররা চালু করেন" পুণ্যাহ "অনুষ্ঠান। পহেলা বৈশাখে প্রজারা নবাব বা জমিদার বাড়িতে আমন্ত্রিত হতেন, তাদের মিষ্টি মুখ করানো হতো। পান সুপারির ও আয়োজন হতো। তবে তার মূল উদ্দেশ্য ছিল খাজনা আদায়। মুর্শিদাবাদের নবাবেরা এ অনুষ্ঠান করতেন।বাংলার জমিদাররা করতেন এ অনুষ্ঠান।জমিদারি উঠে যাওয়াই তাই এখন লুপ্ত হয়ে গিয়েছে।পহেলা বৈশাখের দ্বিতীয় বৃহৎ অনুষ্ঠান ছিল হালখাতা। অনুষ্ঠান করতেন ব্যবসায়ীরা।



বাংলা নববর্ষের আরেকটি প্রধান অনুষ্ঠান হল বৈশাখী মেলা।এই মেলা ২-৩ দিন বাপী অনুষ্টান হতো।মেলায় বিভিন্ন মিষ্টিজাতীয় খাবারের দোকান বসে।হরেক রকমারির দোকান বসে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈশাখের প্রথম দিনে বার্ষিক মেলা বসে। এই সব মেলার অনেকগুলোই বেশ পুরনো। এই মেলাগুলোর মধ্যে খুব প্রাচীন ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদের মেলা এবং চট্টগ্রামের মহামনির বৌদ্ধ পূর্ণিমা মেলা।



নববর্ষের দিন সকালে ইলিশ পান্তা খাওয়ার আয়োজন করা হয়। ছোট-বড় পরিবারের সবাই মিলে আনন্দের সাথে পান্তা ইলিশ খাওয়া হয় এরপর বিকেলে খোলা মাঠে মেলার আনন্দঘন মুহূর্ত সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মেলাতে থাকে হরেক রকমের দোকান। বাচ্চাদের জন্য সাজানো হয় বিভিন্ন ধরনের খেলনা। এই মেলাতে মেয়েরা শাড়ি এবং ছেলেরা পাঞ্জাবিতে নিজেদের ফুটিয়ে তোলে। পহেলা বৈশাখে কারুকাজের চিত্র সাজিয়ে তোলা হয়।

নববর্ষের অনুচ্ছেদ: নববর্ষের ওই তিনটি প্রধান সর্বজনীন উৎসব ছাড়াও বহু আঞ্চলিক উৎসব আছে। এদের মধ্য চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত বলি খেলা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ১৯০৭ সাল থেকে কক্সবাজার সহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের নানা স্থানে এই খেলার প্রচলন আছে। এ বিখ্যাত কুস্তি খেলাকে বলা হয় বলি খেলা।

নববর্ষের এ ধরনের আরো নানা অনুষ্ঠান আছে। তোমরা নিজ নিজ এলাকায় খুঁজে নিলে তার সন্ধান পাবে। তোমাদের সঙ্গে পরিচয় ঘটবে নানা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিক বৈচিত্রর।গ্রাম বাংলায় নববর্ষের নানা খেলাধুলার আয়োজন করা হতো। মুন্সিগঞ্জে হত গরুর দৌড়, হাডুডু খেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোরগের লড়াই, কিশোরগঞ্জ নেত্রকোনা নড়াইলে ষাড়ের লড়াই প্রভৃতি।

শেষ কথা আমাদের নববর্ষ উৎসব ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পরে নতুন গুরুত্ব ও তাৎপর্য লাভ করে। সংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানোটের আয়জনের কথা বলেছি।এছাড়া বাংলা একাডেমিতে বৈশাখী ও কারুপন্য মেলা এবং গোটা বিশ্ববিদ্যালয় ও রমনা এলাকা পহেলা বৈশাখের দিনে লক্ষ মানুষের পথচরনায় মুখর হয়ে ওঠে। নতুন পাজামা পাঞ্জাবি পড়ে ছেলেরা এবং নানা রঙের শাড়ি ওরে মেয়েরা এই অনুষ্ঠানকে বর্ণিল করে তোলে। নজরুল সংগীত, লোক সংগীত এবং বাঁশির সুরে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে সমবেত আবাল -বৃদ্ধ- বনিতা। আনন্দময় ও সৌহার্দ্যপূর্ণ এই পরিবেশ আধুনিক বাঙালি জীবনের এক গৌরবময় বিষয়।








Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url