সজনে পাতার উপকারিতা। সজনে পাতার ঔষধি গুণ।

সজনে পাতার উপকারিতা। সজনে পাতার ঔষধি গুণ।

আসসালামু আলাইকুম,
বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় একটি সুপার ফুড নিয়ে আলোচনা করব। আমরা ছোটবেলা থেকে অনেক খাবারে খেয়ে এসেছি তার মধ্য এটি হলো শ্রেষ্ঠ এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সবজি। আজকে আমরা আলোচনা করব সজনে পাতা এবং সজনে ডাটার উপকার নিয়ে। বর্তমান সময়ে সজনে পাতাকে বলা হয় অলৌকিক পাতা। বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় সজনে পাতাকে অলৌকিক পাতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কেননা সজনে পাতার ভ্যালু ভালো অনেক বেশি। সজনে পাতা কে এক কথায় সুপার ফুড বলা হয়। সজনে পাতায় বিভিন্ন পুষ্টি গুন রয়েছে

সাজনে পাতার উপাকারিতা

সূচিপত্র :

  • সজনে পাতায় কোন কোন ভিটামিন আছে
  • সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা
  • সজনে পাতা কিভাবে খাওয়া যায়
  • সজনে পাতার গুড়া ও জুস করার পদ্ধতি
  • কিছু সতর্কতা অবলম্বন করুন
  • পরিশেষে

আদিকাল থেকে মানুষ এগুলো খেয়ে এসেছে যা বর্তমান সময়ে এটির জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। সজনে পাতার বৈজ্ঞানিক নাম Moringa Oleifera.প্রাচীন যুগের মানুষ এই শাক পাতাগুলো খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। এই সময়ে ওষুধের প্রক্রিয়া হিসেবে তারা গাছ গাছান্তর ঔষধ খেয়ে নানান রোগ থেকে মুক্তি পেত। যা বর্তমান সময়ে মানুষ আরো বেশি এইসব খেয়ে থাকছে।

সজনে পাতা অ্যাথ্রাইটিস নিরাময়ে কার্যকর। যা শরীরকে ডিটক্সিফাই করে। যাদের হাঁটুর ব্যথা জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যাথা কোমর ব্যাথা ইত্যাদি সমস্যা রয়েছে সজনে পাতা এসব ব্যথা নিরাময়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও আরো নানান উপকার করে যেমন, রক্তের শিরায় রক্ত সঞ্চালন, রক্ত বৃদ্ধি, থাইরয়েড সমস্যা, হরমোনের সমস্যা ইত্যাদি রোগ নিরাময়ে উপকারী এই সজনে পাতা। একটি সবজির মধ্যে অনেকগুলো ভিটামিন থাকায় এটি চাই তা অনেক বেশি।

সজনে পাতায় কোন কোন ভিটামিন আছে

সজনে পাতা অন্যান্য শাকসবজি থেকে পুষ্টিগুণ বেশি হাওয়ায় এ পাতায় ভিটামিন ও বেশি রয়েছে। সজনে পাতায় সজনে ডাটার চাইতে ভিটামিনের পরিমাণ বেশি। সজনে পাতা আমাদের বিভিন্ন রোগের প্রতিকারক হিসেবে কাজ করে। চলুন তাহলে জেনে নিই সজনে পাতায় কোন কোন ভিটামিন রয়েছে এবং তার পরিমাণ কত?

আমিষ ২৭% আঁশ বা ফাইবার ১৯% ফ্যাট ২% শর্করা ৩৮% সোডিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন এ ৩৭৮ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন সি ৫১.৭ মিলিগ্রাম লৌহ ৪.০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ১৮৫ মিলিগ্রাম প্রোটিন ৯.৪০ গ্রাম স্নেহ ১.৪০ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম ১৪৭ মিলিগ্রাম

আঁশ বা ফাইবার কে খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কম্পনেন্ট বলা হয়। প্রতিদিন আপনার খাদ্য তালিকায় আঁশ বা ফাইবার যুক্ত খাদ্য থাকা উচিত। সজনে পাতায় ১৯% আঁশ বা ফাইবার রয়েছে এটি দৈনিক খাবার তালিকা রাখতে হবে যা হজমশক্তিতে অনেক কার্যকর। এছাড়া সজনে পাতায় এসেন্সিয়াল আমিনো এসিড রয়েছে আটটি। ভিটামিন এ,সি, ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম পটাশিয়াম জিংক আইরন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি ভিটামিনের ভরপুর। এইসব নিউট্রিশন থাকার কারণে সজনে পাতার গুণাবলী বৈশিষ্ট্য অনেক।সজনে পাতা ও গরুর দুধে একই পরিমাণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে। গরুর দুধ খেলে যেমন ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করা যায় তেমনি সজনে পাতা খেলে ও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। বিভিন্ন ব্যথার রোগ নিরাময় করতে ডাক্তাররা সজনে পাতা খাওয়ার কথা বলেন। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন বইয়ে বা বিভিন্ন মাধ্যমের সাহায্যে এটা জেনেছি যে সজনে পাতার গুনাগুন অনেক বেশি এটি বহু গুণে বহু রোগ নিরামযের় অন্যতম উপায়।

সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা

  • ভিটামিন A,C এবং E ক্যালসিয়াম আয়রন প্রোটিনের মত প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ।
  • রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে ও ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার।
  • ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস খাবার হওয়ায় দাঁত ও হাড় মজবুত রাখে।
  • ত্বক উজ্জ্বল করে ব্রণ কমায় এবং বার্ধক্য ধীর করে।
  • হজম শক্তি বাড়ায় পেটের রোগ ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
  • মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
  • ক্লান্তি ভাব কমাতে ও সক্রিয় থাকতে সাহায্য করে।
  • বিভিন্ন পুষ্টিগুণ থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এছাড়াও দৈনিক খাবার গ্রহণের ফলে রক্তের শর্করা বৃদ্ধি করে ও হিমোগ্লোবি ঠিক রাখে।
  • সজনে পাতা হৃদরোগীদের জন্য ঠিক ওষুধের মতোই কাজ করে, রক্তচাপ কমায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে, কোলেস্ট্ররল কমায়।
  • ১ টেবিল চামচ শুকানো সজনে পাতার গুড়া থেকে ১-২ বছরের শিশুদের অত্যবশকীয় ১৪% আমিষ, ৪০% ক্যালসিয়াম, ২৩% লৌহ ও ভিটামিন এ সরবরাহ করে থাকে।
  • দৈনিক ৬ টেবিল চামচ পাতার গুড়া একটি গভবতী বা স্তন্যদানকারি মায়ের চাহিদার সবটুকু ক্যালসিয়াম আইরন শর্করাও সরবরাহ করতে সক্ষম
  • এলার্জি জনিত সমস্যা দূর করতে সজনে পাতা পাঠায় বেটে আক্রান্ত স্থানে লাগালে ভালো হয়।
  • মেধা শক্তি বিকাশে ও শারীরিক বিকাশে সাহায্য করে।
  • সজনে পাতার জুস খেলে গ্যাস্টিক বা এসিডিটি থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • হাড় বা জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  • হাট কে সুস্থ রাখে। লিভারের সমস্যা কমায়।


সজনে পাতা কিভাবে খাওয়া যায়

সজনে পাতা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায। তবে অঞ্চল ভেদে এক এক জন এক এক নিয়মে রান্না করে থাকে। রান্না করার প্রক্রিয়া
সুজনে পাতা ভর্তা করে খাওয়া যায় মাছের সাথে চচ্চড়ি করে খাওয়া যায় পাকোড়া করে খাওয়া যায়। বিভিন্ন আইটেম অথবা ডেজার্ট ব্যবহার করা যায়। যেকোনো ঝোল তরকারির সাথে খাওয়া যায়। ভাজি করে খাওয়া যায়। জুস বানিয়ে খাওয়া যায়।

সজনে পাতার গুড়া ও জুস করার পদ্ধতি

আমরা অনেকেই বিভিন্ন রোগে জন্য সজনে পাতার গুড়া ও জুস খেয়ে থাকি। কিন্তু সজনে পাতার গুড়া কিভাবে বানাবো বাকি ভাবে সংরক্ষণ করব এটা নিয়ে অনেক ঝামেলার মধ্যে পড়তে হয়। আজকে আমরা জানবো সজনে পাতার গুড়া জুস করার নিয়ম

এখন গ্রামে বা শহরে সব জায়গাতে সজনে গাছ দেখা যায়। সজনের সতেজ পাতা গাছ থেকে সংগ্রহ করে দিতে হবে। এরপর পাতাগুলোকে ডাল থেকে আলাদা করতে হবে। একটি পরিষ্কার ডালা অথবা কাগজে করে কড়া রোদে পাতাগুলোকে ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে। পাতাগুলো ভালোভাবে রোদে শুকানো হলে ব্লেন্ডারের ব্লেন্ড করে নিতে হবে যাদের বাসায় ব্লেন্ডার নেই তারা চাইলে শিলপাটায় গুড়া করে নিতে পারেন। এভাবেই গুঁড়ো করা যায়। এটি আপনি একটা কাচের যারে রেখে সংরক্ষণ করতে পারেন। ৬ মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত ভালো থাকবে।
এবার জুস করার পালা যারা গুড়ো খেতে পছন্দ করেন না তারা জুস করে খেতে পারে। জুস করার নিয়ম হলো প্রথমে সজনে পাতা পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে এবার পরিষ্কার করে রাখা পাতা ব্লেন্ডারে দিতে হবে তারপর সামান্য একটু পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে নিলে এটা রস বেরিয়ে আসবে। এবার একটি পরিষ্কার কাপড় অথবা ছাকনির সাহায্য ছেকে নিলেই জুস রেডি।এবার এটি পান করতে পারে। খুব সিম্পল সহজ ভাবে এটা করা যায়।

কিছু সতর্কতা অবলম্বন করুন

আমরা দৈনিন্দ্য জীবনে অনেক কিছুই খেয়ে থাকি তবে এর কিছু গুণ থাকে আবার কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। সজনে পাতা বেশি খেলে আবার কোন রোগীদের জন্য সতর্কতা মেনে চলতে হবে চলুন দেখে নেই

১. সজনে পাতা এমন এক ধরনের সবজি যা অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য। এটি অনেক ক্ষেত্রে সর্তকতা মেনে চলতে হবে যেমন যাদের হাইপো থাইরয়েড আছে বা কিডনি জনিত সমস্যা অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদি যেসব রোগীরা আছেন তাদের জন্য একটু সতর্কতা মেনে চলতে হবে। কেননা সজনে পাতা অতিরিক্ত সেবনে তাদের দীর্ঘমেয়াদি রোগকে মুক্ত না করে আরো বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়। ২. স্তন্যদানকারী মায়ের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে কেননা অনেকে মনে করে বেশি বেশি সজনে পাতা খেলে মায়ের স্তনে দুধ বেশি হয়। কিন্তু একথা কোথাও প্রমাণিত নয় এজন্য এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। স্তন্যদানকারী মায়েদের সজনে না খাওয়াই উচিত। ৩. ডায়াবেটিস রোগীরা এবং অন্যান্য রোগীরা মনে করে সজনে পাতা খেলে রোগ থেকে মুক্ত পাবেন। কিন্তু এই সজনে পাতার গুড়া বা জুস খাবার পাশাপাশি ঔষধ সেবন করতে হবে। ৪. গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে সজনে পাতার গুড়ো না খাওয়াই উচিত। এতে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল মিশানো হয় যা আপনার গর্ভের বাচ্চার জন্য ক্ষতি হতে পারে।

৫. শুধু সজনে পাতা নয় সব খাদ্য সামগ্রী নিয়ম মেনে খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত সেবনে আপনার ক্ষতি হতে পারে।

পরিশেষে

সজনে পাতা এমন এক ধরনের সবজি যে আমরা সবাই খেয়ে থাকি। সজনে পাতায় পুষ্টি এবং ভিটামিন থাকাই এটি অনেক রোগের উপকার করে থাকে। তবে এর কিছু অপকারিতা ও রয়েছে তা আমরা উপরের আলোচনায় জেনেছি। প্রাকৃতির অলৌকিক পাতা হিসেবে সারা ফেলেছে সারা বিশ্বে। এটি বিভিন্ন খাবারের সাথেও রান্না করে খাওয়া চাই। দেশজুড়ে এর চাহিদাও অনেক বেশি। প্রাচীনকাল, মধ্যযুগ, বর্তমান সময়েও এর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।

প্রিয় পাঠক ও পাঠিকা নিত্যনতুন আর্টিকেল বা পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন এবং অন্যদের জানানোর জন্য বেশি বেশি শেয়ার করবে। আপনার মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করতে পারেন। ধন্যবাদ
























Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url