শীতকালে বাচ্চাদের ত্বকের যত্ন
শীতকালে বাচ্চাদের ত্বকের যত্ন
শীত আসি আসি করতে ছোট শিশুদের ত্বকের নানান রকমের সমস্যা দেখা দেয়। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে অভিভাবকরা। এই সমস্যায় ঠিক কি ভাবে শিশুদের যত্ন নিবেন তা নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকে শিশু বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে সব বয়সের শিশুদের জন্য নিতে হবে বাড়তি যত্ন আর থাকতে হবে সতর্ক। শীত এলে নরম এই ত্বকের অবস্থা হয় নাচোস। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে মা কিন্তু নিজের সন্তানের যত্নে আপোষের পথে থেমে থাকে না। মায়ের পরম ভালোবাসা আর যত্নের ছোঁয়ায় ভালো থাকে শিশুর নরম ত্বক। শিশু ত্বকের যত্নে বড়াবড়ই মালিশের একটা গুরুত্ব ছিল আদিকাল থেকে। বড়দের চেয়ে শিশুদের ত্বক ৫ গুন পাতলা হয় নিতে হয় বাড়তি যত্ন।
আপনার শিশুর বয়স যদি এক থেকে দেড় বছর হয় তাহলে শীতে ত্বক ভালো রাখতে তরল জাতীয় খাবার বেশি খাওয়াতে হবে। যেমন গরম দুধ সুজি সুপ। এছাড়াও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল খাওয়াতে হবে। শীতে ঠান্ডা জনিত রোগের পাশাপাশি এলার্জি জনিত সমস্যা বেশি দেখা দেই। এ সময় ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায় এবং ত্বকেও নানান রকম সমস্যা দেখা দেয়।
বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। বাংলাদেশের ইংরেজি মাসের নভেম্বর মাস থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত শীত হয়। আর এই তীব্র শীতে বাচ্চাদের নিতে হয় বিশেষ যত্ন। শীতে বাচ্চার শরীর নরম রাখতে এবং বাচ্চার খসখসে ত্বককে মশ্চায়ার রাখতে মা তার সন্তানকে তেল মাখিয়ে থাকেন। তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে একটু সতেচনতার সাথে করা উচিত।
খাঁটি সরিষার তেল
বাচ্চাদের এবং বড়দের সবার ক্ষেত্রে সরিষার তেল অনেক উপকারী একটি উপাদান।সরিষার তেল বাচ্চাদের গায়ে মালিশ করালে তারা অনেক আরাম পায় এবং ঘুমাই বেশি। কিন্তুু এর একটি খারাপ দিক হল তেল চিটচিটে ভাব। সরিষার তেল বাচ্চাদের গায়ে মালিশ করালে তেল চিটচিটে ভাব হয় যা বাচ্চার ব্যবহৃত জামা কাপড়ে ও প্রভাব ফেলে। অনেক শিশু এলার্জির জনিত সমস্যায় ভোগেন এসব শিশুদের ক্ষেত্রে সরিষার তেল ব্যবহার না করাই উচিত। সরিষার তেলে এলার্জি সমস্যা বাড়ায় যার কারণে বাচ্চার শরীরে ছোট ছোট ঘামাচি আকারের এলার্জির প্রভাব দেখা দেয়। তবে এরকম সমস্যা দেখা দিলে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ মত বাচ্চার শরীরের তেল দেওয়া উচিত।
নারিকেল তেল
সরিষার তেলের পাশাপাশি নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। তবে এটিও হতে হবে এক্সট্রা ভার্জিন খাঁটি নারিকেল তেল। খাঁটি নারিকেল তেল বাচ্চাদের গায়ে মালিশ করলে তাদের শুষ্ক খসখসে ত্বককে মলায়ম করে তোলে।বাচ্চারা অনেক আরাম পায়। শীতে বাচ্চাদের গায়ে খসখসে ভাব অনুভব করে এবং গা চুলকায় এতে করে বাচ্চারা অনেক কান্নাকাটি করে ঠিকমতো ঘুমাতে চায় না সরিষার তেল বা নারিকেল তেল মাখালে শিশুরা অনেক আরাম পায় এবং আনন্দের সাথে খেলা করে।
অলিভ অয়েল এবং আমন্ড অয়েল
সরিষার তেল এবং নারিকেল তেল এ ২ টা তেলের পাশাপাশি অলিভ অয়েল এবং আমন্ড অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। অলিভ অয়েল বাচ্চার শরীরে মাখালে এর কোন ক্ষতি হয় না। একটি বাচ্চার শরীরের মরা চামড়া কে তুলে ফেলে ত্বকে করে তোলে উজ্জল। অনেক মায়েরা মনে করেন অলিভ অয়েল মাখালে বাচ্চারা কালো হয়ে যায় এটা একদম ভুল ধারণা। শীতকালে অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে বাচ্চার গায়ের রং কালছে দেখায়। এটি ছোট বড় সবার হয়ে থাকে। অলিভ অয়েল ও আমন্ড ওয়েলে বিশেষ উপাদান দিয়ে তৈরি হওয়ায় এটি শরীরে মাখা যায় এবং খাবার হিসেবেও বিভিন্ন তরকারিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
শীতকালে শিশুদের গোসল
শীতকালে শিশুদের গোসলের সময় মায়েদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত কেননা এই সময় বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা বেশি। অতিরিক্ত গোসল করালে বাচ্চার ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। অনেক মায়েরা আছেন যারা বাচ্চার গোসল করার সময় মাথায় পানি ঢালে সেসব মায়েদের একটু সতর্ক থাকা উচিত। শীতকালে বাচ্চাদের কিভাবে গোসল করাতে হবে চলুন তা একটু জেনে নিন
শুরুতেই যা করতে হবে সেটি হচ্ছে বাচ্চাকে সকাল দশটা থেকে এগারোটার মধ্যে গোসল করাতে হবে। বাচ্চাকে গোসল করানোর পর যে রুমে নিয়ে আসবেন সে রুমের জানালা দরজা বন্ধ রেখে রুমকে একটু গরম রাখতে হবে। রুম গরম রাখার জন্য অনেকে রুম হিটার ব্যবহার করে থাকে। এতে কোন সমস্যা নেই। বাচ্চার কাপড় আগে থেকে রেডি করে রাখতে হবে যেন বাচ্চার গায়ে পানি ঢালার পরে কাপড় খুঁজতে না হয়। বাচ্চাদের গোসল করানোর আগে খাঁটি সরিষার তেল বা অন্যান্য তেল কাই মালিশ করাতে হবে এতে করে বাচ্চার গায়ে পানি ঢালার সাথে সাথে পানি নেমে যায়। গোসলের পানি হালকা কুসুম গরম থাকতে হবে বাচ্চার মাথায় পানি ঢালার আগে তাদের হাত এবং পা ভালো করে ধুয়ে দিতে হবে কেননা অনেক বাচ্চা খেলাধুলার সময় অনেক জিনিস ধরে থাকেন এতে বাচ্চার হাতে জীবাণু লেগেযায় যার কারণে বাচ্চার হাত ধোয়া বিশেষভাবে প্রয়োজন। শিশুদের তিন থেকে চার মিনিট গোসল করাতে হবে এর বেশি পানিতে রাখা যাবে না। নরম গামছা বা তোয়ালা দিয়ে বাচ্চার গা সম্পন্ন ভালোভাবে মুছে দিতে হবে।
শীতে বাচ্চাদের সর্দি কাশির ঘরোয়া চিকিৎসা
শীতকালে অনেক শিশুর জ্বর সর্দি কাশির হয়ে থাকে সেগুলো ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে ভালো করা যায় জেনে নেয়
১. ০-৬ মাস বয়সের বাচ্চাদের ইমিউনিটি পাওয়ার ক্ষমতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। এ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জ্বর সর্দি প্রভাব অনেকটাই বেশি হয়। তাদের সর্দির কারণে ঘুমাতে গেলে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় নিশ্বাস নিতে পারে না এর ফলে অনেক কান্নাকাটি করে খেতে চায়না, তারা বাসায় সব সময় Nasoclear Drop রাখতে পারেন। এটি বাচ্চাদের নাকের এক ফোঁটা এক ফোটা করে দিলে বাচ্চার শ্বাস নিতে সুবিধা হবে। এটি বাসায় না থাকলে আপনারা ঘরে তৈরি করে নিতে পারবেন, এক চামচ কুসুম গরম পানিতে এক চিমটি লবণ দিয়ে গুলে নিলে তৈরি হয়ে যাবে।
২. দুই কোয়া রসুন দুই চামচ জোয়ান একটি পরিষ্কার করায়ে ৩-৪ মিনিট টেলে নিয়ে একটি পরিষ্কার কাপড়ের ঢেলে একটি পুটলি বানিয়ে নিতে হবে। এরপর সেটি বাচ্চা যেখানে ঘুমায় বা বাচ্চার বালিশের পাশে সারারাত রেখে দিন এতে রসুন এবং জোয়ানের স্মেল বাচ্চার নাক দিয়ে টেনে নিবে বাচ্চা বন্ধ হওয়া না খুলে যাবে।
৩. একটি পরিষ্কার পাত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নিন এবং এটি চুলার মধ্যে বসিয়ে বলক তুলে নেই সে পানি বলক উঠলে চুলা বন্ধ করে পানের বাষ্প নাক দিয়ে শুষে নিন এতে বন্ধ নাক খুলে যাবে একটি ছোট বড় সবাই করতে পারবেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে ছোটরা যেন এই গরম পানি স্পর্শ না করে।বাজারে অনেক স্টিমার পাওয়া যায় সেটা দিও বাচ্চাদের এ পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।
৪. বাচ্চা সর্দি কাশিতে বাচ্চাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ মায়ের বুকের দুধ পান করাতে হবে এতে বাচ্চার শরীর অনেকটাই গরমে ওঠে। মায়ের বুকে দুধে যে আন্টিবডি থাকে একটি বাচ্চার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৫. বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগলে তাদের নিশ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয়। এজন্য বাচ্চাদের উচু স্থানে সোয়াতে হবে। তাদের মাথার বালিশ উঁচু করে দিতে হবে তাতে বাচ্চা শ্বাস নিতে সুবিধা হবে।
৭. আদা ও তালমিছরি এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে তা ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে বাচ্চাদের পান করালে কাশি এবং ঠান্ডা ভালো হয়ে যায়।
৮.দু তিন চামচ গরম পানি আর কয়েক ফোঁটা লেবুর রস তার সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে বাচ্চাদের খাওয়ালে কাশি দূর হয় একটি গলা ব্যথা কমায় তার পাশাপাশি গলার খুসখুসে কমাতে সাহায্য করে।
বাচ্চাদের অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগলে জ্বর সর্দি এবং বাচ্চার বুকে কফ বসে গেলে জরুরী ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
শীতে বাচ্চাদের ড্রাইপার পড়ার নিয়ম
শীত নিয়ন্ত্রণে বাচ্চাদের ড্রাইপার পড়ানো হয়। কিন্তু এই ড্রাইপার কতক্ষণ পরিয়ে রাখতে হবে সেটা আমরা খেয়াল করি না। বাচ্চাদের ডাইপার পরানো ভালো এতে বাচ্চারা অনেকটা সুরক্ষা পায় ভেজা সাঁতসাতে জায়গায় থাকতে হয় না। কিন্তু অতিরিক্ত ড্রাইপার পড়ালে বাচ্চার ত্বকে ফুসকুড়ির মত দেখা দিতে পারে। এতে করে বাচ্চার অনেক কষ্ট পায় এবং কান্নাকাটি করে। ডাইপার পরার ক্ষেত্রে মায়েদের একটু সতর্ক থাকতে হবে।
ময়েশ্চারাইজার
ময়েশ্চারাইজার বাচ্চা ত্বকের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ চলুন একটু জেনে নেই
অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে আপনার বাচ্চার ত্বক ময়েশ্চারাইজার হারিয়ে ফেলে ত্বক হয়ে ওঠে শুষ্ক ও খসখসে। এই শুষ্ক ও খসখসে ত্বককে মশ্চারাইজ করার জন্য বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এটা বাচ্চার ত্বকের জন্য কতটা স্বাস্থ্যকর সেটা আমরা খেয়াল করি না। অনেক সতর্কতার সাথে ময়শ্চারাইজ বাবার করা উচিত। ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করার ফলে অনেক সময় বাচ্চার ত্বক লাল লাল ছোপ ছোপ দাগ এবং ফুসকুড়ির মত দেখা দেয়। আমাদের উচিত শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিয়ে তারপর বাচ্চাদের মশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত বাচ্চারা ছোট হয় এদের ত্বক অনেক নরম হয়।
কিছু সতর্ক বার্তা বর্তমান বাংলাদেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা অনেক নকল প্রসাধনী তৈরি করছে।এদিকে সতর্ক থেকে বাচ্চাদের ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা উত্তম।
নিত্য নতুন আর্টিকেল করতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন এবং বেশি বেশি শেয়ার করে অন্যকে জানানোর সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ