হায়েজ অবস্থায় কায়দা পড়ার বিধান

 হায়েজ অবস্থায় কায়দা পড়ার বিধান কি? তা জানতে চাইলে নিচে উল্লেখিত  তথ্য গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। নিচে হায়েজ অবস্থায় কায়দা পড়ার বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হবে। তো আসুন দেখে নেয়া যাক, হায়েজ অবস্থায় কায়দা পড়ার বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত।

পেজ সূচিপত্র: হায়েজ অবস্থায় কায়দা পড়ার বিধান

ভূমিকা 

মাসিক ঋতুস্রাব অবস্থায় কায়দা বা আমপারা পড়া যাবে কিনা এই বিষয় সম্পর্কে অনেকের মনেই প্রশ্ন রয়েছে। আপনার মনেও যদি এই ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে নিম্ন বর্ণিত তথ্য গুলো মনোযোগের সাথে পড়ুন। আপনি যদি নিচে উল্লেখিত তথ্য গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে আশা করা যায় আপনি আপনার প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেয়ে যাবেন। 

হায়েজ অবস্থায় কায়দা পড়ার বিধান সম্পর্কে আলোচনা করার পাশাপাশি নিচে হায়েজ অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ এবং হায়েজ অবস্থায় ইবাদত করা সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হবে। যাই হোক আসুন দেখে নেয়া যাক, হায়েজ অবস্থায় কায়দা পড়ার বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।  

হায়েজ অবস্থায় কায়দা পড়ার বিধান

নারীদের যখন হায়েজ হয় তখন তাদের বেশ কিছু কাজে নিষেধাজ্ঞা থাকে। এই অবস্থায় ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী কিছু কিছু কাজ করা সম্পূর্ণ নিষেধ। এখন প্রশ্ন হলো নারীদের হায়েজ হলে তারা কি কায়দা পড়তে পারবে? অর্থাৎ হায়েজ অবস্থায় কায়দা স্পর্শ করা যাবে কিনা, বা পাঠ করা যাবে কিনা? 

হায়েজ অবস্থায় কায়দা পড়ার বিধান হলো: হায়েজ অবস্থায় কায়দা করা যাবে। কেননা কায়দা বইয়ে সাধারণত কুরআনের কোন আয়াত থাকে না। যেহেতু কায়দাতে কোন কুরআনের আয়াত নেই তাই অবশ্যই হায়েজ অবস্থায় কায়দা স্পর্শ করতে বা পাঠ করতে কোন সমস্যা নেই। তবে আমপাড়ায় যেহেতু সূরা এবং কুরআনের আয়াত রয়েছে তাই আম পারা পড়া যাবে না।
কেননা হায়েজ অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ, এবং অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের মতে হায়েজ অবস্থায়  পবিত্র কুরআন পাঠ করা নিষেধ। কিন্তু আরবি অক্ষর বা শব্দ স্পর্শ করা বা পাঠ করাতে কোন সমস্যা নেই। তাই হায়েজ অবস্থায় কায়দা অবশ্যই স্পর্শ করতে পারবে এবং পড়তে পারবে। 

হায়েজ অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ

হায়েজ অবস্থায় কায়দা পড়ার বিধান সম্পর্কে আশা করি জানতে পেরেছেন। নিচে হায়েজ অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। হায়েজ এবং ঋতুস্রাব অবস্থায় নারীদের জন্য যে সকল কাজ করা নিষিদ্ধ সেই কাজ সমূহের তালিকা নিচে তুলে ধরা হবে। তাই হায়েজ অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ সমূহ সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগের সাথে পড়তে থাকুন। তো আসুন জেনে নেয়া যাক, হায়েজ অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত। 

নামাজ পড়া: নারীদের যখন মাসিক ঋতুস্রাব দেখা দিবে তখন তারা নামাজ পড়বেনা। কেননা মাসিক ঋতুস্রাবের সময় নামাজ পড়া নিষেধ। বিশেষ এই সময় গুলোতে মহান আল্লাহ তায়ালা নারীদের জন্য নামাজকে স্থায়ীভাবে মওকুফ করে দিয়েছেন আর রোজাকে করেছেন সাময়িকভাবে মওকুফ। মাসিক ঋতুস্রাব অবস্থায় নামাজ না পড়লে তা পরবর্তীতে আর আদায় করতে হবে না। কিন্তু রোজা রাখতে না পারলে তা পরবর্তীতে কাজা করতে হবে। 

রোজা রাখা: নামাজের মত মাসিক ঋতুস্রাব অবস্থায় রোজা রাখাও নিষেধ। রোজা রাখা অবস্থায় যদি কোন নারীর এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে তাকে রোজা ভঙ্গ করতে হবে এবং পরবর্তীতে তা আদায় করে নিতে হবে। 

কুরআন তেলাওয়াত করা: অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের মতে হায়েজ অবস্থায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা যাবে না। আর তাই হায়েজ অবস্থায় পবিত্র কোরআন স্পর্শ করা কিংবা তিলাওয়াত করা নিষেধ। কেননা মহান আল্লাহতালা বলেছেন, "নিশ্চয় এটি মহিমান্বিত কুরআন, যা সুরক্ষিত কিতাবে রয়েছে, কেউ তা স্পর্শ করবে না পবিত্রগণ ছাড়া।" (সূরা আল-ওয়াকিয়াহ, আয়াত: ৭৭-৭৯) যেহেতু নারীগন বিশেষ এই অবস্থায় অপবিত্র থাকে তাই এ সময় কুরআন তেলাওয়াত করা এবং স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। 

সহবাস করা: হায়জ অবস্থায় সহবাস করা সম্পূর্ণ রূপে নিষেধ। এই প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন, "লোকেরা আপনাকে হায়েজ তথা ঋতুস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলে দিন, তা অপবিত্রতা। অতএব তোমরা হায়েজের সময় স্ত্রীদের থেকে পৃথক থাকো এবং তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়।" (সুরা বাকারা, আয়াত : ২২২) 

সুতরাং বোঝা গেল এই সময় অবশ্যই নারীদের থেকে আলাদা থাকতে হবে। অর্থাৎ তাদের সাথে সহবাস করা যাবে না। এ ব্যাপারে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, রাসুল (সা:) ইরশাদ করেছেন, "যে ব্যক্তি কোনো ঋতুবতীর সঙ্গে মিলিত হয় কিংবা কোনো নারীর পশ্চাদ্দ্বারে সঙ্গম করে অথবা কোনো গণকের কাছে যায়, নিশ্চয়ই সে মুহাম্মাদের ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করে।" (তিরমিজি, হাদিস : ১৩৫) 
উপরে উল্লেখিত পবিত্র কুরআনের আয়াত এবং হাদিসের মাধ্যমে এ কথা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, হায়েজ অবস্থায় কোনভাবেই নারীদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হওয়া যাবে না। যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে হবে হায়েজ অবস্থায় সহবাসে লিপ্ত হয়, তাহলে সে কবিরা গুনাহগার হবে এবং তার উপরে কাফফারা প্রদান করা ওয়াজিব হবে। 

মসজিদে প্রবেশ করা: হায়েজ অবস্থায় নারীগণ মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে না। কেননা অপবিত্র অবস্থায় আল্লাহর ঘরে প্রবেশ করা বৈধ নয়। যেহেতু নারীগণ হায়েজের সময় গোসল ফরজ অবস্থায় থাকেন, সেই সময় তারা কোন অবস্থাতেই মসজিদে প্রবেশ করতে পারবেন না। 

তাওয়াফ করা: হজ্জের অন্যতম একটি অনুসংখ্যা হল কাবা ঘর কাবাব করা। হজ করতে গিয়ে যদি কোন নারী ঋতুগ্রস্থ হয়ে পড়ে তাহলে তাকে অবশ্যই তাওয়াফ করা থেকে থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা হায়েজ যাওয়া অবস্থায় পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম নিষেধ করেছেন। 

পবিত্র কুরআনের আয়াত লিপিবদ্ধ করা: ইতোমধ্যেই জানতে পেরেছেন যে, হায়জ অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা কিংবা তেলাওয়াত করা নিষেধ। ঠিক তেমনিভাবে হায়জ অবস্থায় কুরআন লিপিবদ্ধ করাও নিষেধ। কেননা আপনি যখন পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলো লিখবেন তখন তা স্পর্শ করারই শামিল আর এ কারণেই ওলামায়ে কেরামের মতামত হলো হায়েজ অবস্থায়। পবিত্র কোরআন লিপিবদ্ধ করা যাবে না 

হায়েজ অবস্থায় ইবাদত

হায়েজ অবস্থায় কায়দা পড়ার বিধান উপরে তুলে ধরা হয়েছে। আর্টিকেলটির এই অংশে হায়েজ অবস্থায় ইবাদত সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। নামাজ, রোজা, কাবা শরীফ তাওয়াফ করা সহ আরো বিভিন্ন কাজ কর্ম করা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ থাকলেও বেশ কিছু ইবাদত রয়েছে যেগুলো হায়েজ অবস্থায় করা যেতে পারে। 

তাই আপনি আপনার অবসর সময় গুলোকে কাজে লাগানোর জন্য নিম্ন বর্ণিত ইবাদত গুলো বেশি বেশি করে করতে পারেন। নিচে যে সকল ইবাদতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেই ইবাদত গুলো হায়েজ অবস্থায় করতে কোন বাধা নেই। তাই নির্দ্বিধায় নিম্ন বর্ণিত এবাদতগুলো যত খুশি করতে পারেন। তো আসুন দেখে নেওয়া যাক, হায়েজ অবস্থায় যে সকল ইবাদত করা যেতে পারে, সেই এবাদতগুলোর তালিকা। 
  • যিকির করা
  • আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা যায়
  • দুরুদ পাঠ করা যায়
  • দোয়া করা যায়
  • ইস্তেগফার করা
  • জাহান্নামের ভয়াবহতা নিয়ে চিন্তা করা

শেষ কথা

হায়েজ অবস্থায় কায়দা পড়ার বিধান সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। হায়েজ অবস্থায় কায়দা পড়ার বিধান সম্পর্কে আলোচনা করার পাশাপাশি হায়েজ অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজসমূহ এবং হায়েজ অবস্থায় যে সকল ইবাদত করা যেতে পারে, সে বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। 
তাই আপনি যদি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এই আর্টিকেলটি মনোযোগের সাথে পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই হায়েজের সময় করণীয় এবং বর্জনীয় কার্যসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্যবহুল এই আর্টিকেলটি আশা করি আপনার অনেক উপকারে আসবে। এই আর্টিকেলটি আপনার কাছে যদি উপকারী মনে হয়, তাহলে বন্ধুবান্ধব সহ সকলের সাথে শেয়ার করতে পারে। এতে করে তারা ইসলামের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবে। ১৬৪১৩
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url