গলায় ক্যান্সারের লক্ষণ - গলায় ক্যান্সারের চিকিৎসা

 গলায় ক্যান্সারের লক্ষণ গুলো দেখে আমরা খুব সহজেই এটি নির্ণয় করতে পারবো। আমরা জানি যে প্রতিটি রোগের কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ রয়েছে। ঠিক তেমন প্রাথমিকভাবে গলায় ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই আর্টিকেলে গলায় ক্যান্সারের লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

তাহলে চলুন দেরি না করে ঝটপট গলায় ক্যান্সারের লক্ষণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। তো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে হলে আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

সূচিপত্রঃ গলায় ক্যান্সারের লক্ষণ - গলায় ক্যান্সারের চিকিৎসা

গলায় ক্যান্সারের কারণসমূহ

আমরা সকলে এটা জানি যে ক্যান্সারেরও একটি মরণব্যাধি রোগ। কোন মানুষ যদি ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয় সাধারণত সে আতঙ্কের মধ্যে পড়ে যায়। কিন্তু এই মরণব্যাধি ক্যান্সারের কারণ সমূহ সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া প্রাথমিকভাবে গলায় ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশ পায়। কিন্তু এই মরণব্যাধি গলায় ক্যান্সার কেন হয় তার জেনে নেওয়া যাক।

আরো পড়ুনঃ এই গরমে কিভাবে স্কিনের যত্ন নিবেন

গলায় ক্যান্সারের কারণসমূহঃ

  • অতিরিক্ত তামাক এবং মধ্যপন গ্রহণ
  • ধূমপান ও মদ্যপান একসাথে গ্রহণ
  • বংশগত কারণে
  • অতিরিক্ত রেডিয়েশন এর কারণে
  • এসিডিটির কারণে
  • অতিরিক্ত ঝাল এবং মসলা জাতীয় খাবার
  • সবুজ শাকসবজি ও ভিটামিনযুক্ত খাবার না খাওয়া
  • মহিলাদের দীর্ঘদিন ধরে রক্ত শূন্যতা

অতিরিক্ত তামাক এবং মদ্যপান - তামাক ও মদ্যপান মূলত সকল ধরনের ক্যান্সারের জন্য প্রধান কারণ। বাংলাদেশের ৭৫ শতাংশ তামাক এবং তামাক জাত দ্রব্যের কারণে নাক কান গলায় ক্যান্সার হয়ে থাকে।

ধূমপান এবং মদ্যপান একসাথে গ্রহণ - যদি মদ্যপান এর সাথে ধূমপান একসাথে করা হয় তাহলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরো বহুগুণ বেড়ে যায়।

বংশগত কারণে - জেনেটিকস কারণে অর্থাৎ বংশগত কারো যদি ক্যান্সার হয়ে থাকে তাহলে তার পরবর্তী বংশধর এর ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

অতিরিক্ত রেডিয়েশন এর কারণে - কেউ যদি অতিরিক্ত রেডিয়েশনে সংস্পর্শে থাকে সবসময় তাহলে তার গলায় ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক অংশ বৃদ্ধি পায়।

এসিডিটির কারণে - এসিডিটি সমস্যা হতে খাবার পাকস্থলী থেকে বেরিয়ে আসার রোগে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছে এরকম রোগীদের গলায় ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

অতিরিক্ত ঝাল এবং মশলা জাতীয় খাবার - অতিরিক্ত ঝাল এবং মশলা জাতীয় খাবার নিয়মিত ভাবে খাওয়ার অভ্যাস থেকে হতে পারে মুখ এবং গলার ক্যান্সার।

সবুজ শাকসবজি এবং ভিটামিনযুক্ত খাবার না গ্রহণ - সবুজ শাকসবজি এবং ভিটামিন সি এজন্য পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ না করলে গলাতে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

মহিলাদের দীর্ঘদিন ধরে রক্তশূন্যতা - মহিলাদের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে রক্তশূন্যতায় ভোগা নারীদের ক্ষেত্রে গলায় ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অন্যান্য নারীদের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পায়।

গলায় ক্যান্সারের লক্ষণ

প্রতিটি রোগের কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ রয়েছে। যে লক্ষণগুলো দেখে আমরা বুঝবো যে আমরা সেই রোগে আক্রান্ত। যেহেতু ক্যান্সার একটি মরণব্যাধি রোগ তাই এটি হলে আগে থেকেই বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পাই। আমাদের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ক্যান্সার হতে পারে তার মধ্যে গলা অন্যতম। গলায় ক্যান্সারের লক্ষণ জানা থাকে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

গলায় ক্যান্সারের লক্ষণ নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

  • গলা ব্যথা করা
  • দীর্ঘদিন ধরে গলায় কিছু আটকে আছে অনুভূত হওয়া
  • ক্রমাগত শ্বাসকষ্ট হওয়া
  • গলায় দীর্ঘদিন কফ জমে থাকা
  • কোন কারণ ছাড়া গলা দিয়ে রক্ত পড়া
  • গলার ভেতরে লাল ছোপ দেখা দেওয়া
  • দাঁত ও মাড়ির সমস্যা হওয়া
  • ওজন কমে যাওয়া
  • ক্রমাগত কানে ব্যথা করা
  • গলার কন্ঠ পরিবর্তন।

গলা ব্যথা করা - জেনে রাখা ভালো যে গলা ব্যথা ক্যান্সারের একটি অন্যতম লক্ষণ। যদি এটি গলায় ক্যান্সার হয় তাহলে এর প্রধান লক্ষণ হল এটি। বিশেষজ্ঞদের মতে যদি ২১ দিন বা তার বেশি সময় ধরে গলা ব্যথা থাকে তাহলে আপনাকে চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে হবে।

দীর্ঘদিন ধরে গলায় কিছু আটকে আছে অনুভূত হওয়া - অনেক সময় আমাদের মনে হয় গলায় কিছু আটকে আছে। যদি দীর্ঘদিন ধরে আপনার এরকম অনুভূত হয় যে আপনার গলায় কিছু আটকে আছে তাহলে এটি গলার ক্যান্সারের একটি লক্ষণ।

ক্রমাগত শ্বাসকষ্ট হওয়া - শ্বাসকষ্ট বিভিন্ন কারণে হতে পারে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে যদি শ্বাসকষ্ট লেগে থাকে তাহলে এটি গলার ক্যান্সারের অন্যতম একটি লক্ষণ। তাই দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট থাকলে অবশ্যই চিকিৎসা ব্যবস্থা করুন।

গলায় দীর্ঘদিন কফ জমে থাকা - অনেক সময় আমরা অনুভূত করি আমাদের গলায় দীর্ঘদিন ধরে কফ জমে আছে। সাধারণত দীর্ঘদিন ধরে যদি কফ জমে থাকে তাহলে এটি গলার ক্যান্সারের অন্যতম একটি লক্ষণ।

কোন কারণ ছাড়া গলা দিয়ে রক্ত পড়া - কোন কারণ ছাড়াই গলা দিয়ে রক্ত পড়া। যদি এই লক্ষণটি প্রকাশ পায় তাহলে বুঝতে হবে এটি গলার ক্যান্সারের অন্যতম একটি প্রধান লক্ষণ। কারণ গলায় ক্যান্সার হলে কোন কারণ ছাড়াই গলা দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে।

গলার ভেতরে লাল ছোপ দেখা দেওয়া - ক্যান্সারের আরো একটি লক্ষণ গালের ভেতরের অংশে সাদা এবং লাল ছোপ দেখা দেওয়া। সাধারণত এটি গলায় ক্যান্সার হলে মুখের গালের ভেতরে দেখা যায়।

দাঁত ও মাড়ির সমস্যা হওয়া - মুখে এবং গলায় ক্যান্সার হলে দাঁত ও মাড়ির সমস্যা হবে এটা স্বাভাবিক। আপনি যদি কয়েকদিন ধরে মুখে কোন ধরনের সমস্যা দেখেন তাহলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাবেন।

ওজন কমে যাওয়া - যে কোন ক্যান্সারের প্রধান লক্ষণ হল ওজন কমে যাওয়া। যদি আপনার উপরের লক্ষণ গুলোর সাথে ওজন ক্রমাগত কমতে থাকে তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে এগুলো আপনার ক্যান্সারের লক্ষণ মাত্র।

আরো পড়ুনঃ উমরি কাজা নামাজের নিয়ত - উমরি কাজা নামাজের দলিল

ক্রমাগত কানে ব্যথা করা - মুখে এবং গালে ব্যথা হলে সেই ব্যথা আমাদের কানে পর্যন্ত আসতে পারে। কানে ক্রমাগত ব্যথা গলার ক্যান্সারের একটি অন্যতম লক্ষণ। যদি কানে ক্রমাগত ব্যথা হয় তাহলে বুঝতে হবে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত।

গলার কন্ঠ পরিবর্তন - গলায় ক্যান্সারের অন্যতম একটি প্রধান লক্ষণ হল গলার কন্ঠ পরিবর্তন হওয়া। গলায় ক্যান্সারে আক্রান্ত করার ফলে সাধারণত আমাদের গলার কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হয়ে যায়।

গলায় ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়

আমরা ইতিমধ্যেই গলার ক্যান্সারের কারণ এবং এর বেশ কিছু লক্ষণ সম্পর্কে জেনেছি। আমরা জানি যে যে কোন ক্যান্সারের প্রধান এবং মূল কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় ধূমপানকে। কিন্তু অনেকেই আছে যারা ধূমপান করে না তবে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। গলায় ক্যান্সারের লক্ষণগুলো জেনে গলায় ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় বের করতে পারবো।

গলায় ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

১। ক্যান্সার যেহেতু ধূমপানের কারণে হয়ে থাকে তাই এটি প্রতিরোধের অন্যতম প্রধান উপায় হল ধূমপান ত্যাগ করা। আমরা যদি গলায় ক্যান্সার থেকে মুক্তি পেতে চায় তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।

২। স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে যান। ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনিয়মিত খাবার আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই নিয়মিত এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।

৩। সাধারণত শাকসবজি এবং ভিটামিন সি জাতীয় খাবার না খাওয়ার ফলে মানুষ এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই আমাদেরকে নিয়মিত খাদ্য তালিকায় শাকসবজি এবং ভিটামিন সি জাতীয় খাবার রাখতে হবে।

৪। নিয়মিত শরীর চর্চা করা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। নিয়মিত শরীর চর্চা করলে শরীরের হরমোন প্রবাহ কোষ বৃদ্ধির হার এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা স্বাভাবিক থাকে। তাই ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য আপনাকে প্রতিদিন নিয়মিত শরীর চর্চা করতে হবে।

৫। পরিবারের সদস্যদের কোন ধরনের শারীরিক সমস্যা রয়েছে কিনা সে বিষয়ক খোঁজখবর নিয়ে মাসে একবার হলেও স্বাস্থ্য চেকআপ করা উচিত।

গলায় ক্যান্সারের চিকিৎসা

অনেকেই বলে ক্যান্সারের কোন ধরনের চিকিৎসা হয় না। কিন্তু বর্তমান সময়ে এটি সম্পূর্ণরূপ একটি ভুল ধারণা। যদি ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিরাময় করা সম্ভব। একজন ক্যান্সার রোগীর গলায় ক্যান্সারের চিকিৎসা সম্পর্কে জানা উচিত।

গলায় ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

  • প্রাথমিক পর্যায় সার্জারি
  • বিকিরণ থেরাপি
  • কেমোথেরাপি
  • সার্জারি

প্রাথমিক পর্যায়ে সার্জারি - যখন গলার ক্যান্সার আপনার গলার উপরিভাগ সীমাবদ্ধ থাকে, তখন ডাক্তার এন্ডোস্কপির সাহায্যে সার্জিকভাবে চিকিৎসা করতে পারেন। আপনার চিকিৎসক আপনার ভয়েস বাক্স বা গলায় একটি ফাঁকা এন্ডোস্কোপ প্রবেশ করবে এবং এরপরে এই ক্ষেত্রটির মাধ্যমে বিশেষ শল্য চিকিৎসার সরঞ্জাম বা লেজার পাস করবে।

বিকিরণ থেরাপি - রেডিয়েশন থেরাপির জন্য আপনার গলার ক্যান্সারজনিত কোষগুলিতে বিকিরণ সরবরাহ করার জন্য এক্স-রে এবং প্রোটনগুলির মতো উৎস থেকে উচ্চ শক্তি বীম ব্যবহার করা প্রয়োজন, যার ফলস্বরূপ এই কোষগুলি মারা যায়। এটি আপনার শরীরের বাইরে, বাহ্যিক বীম রেডিয়েশন নামে পরিচিত একটি বৃহত মেশিন থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।

কেমোথেরাপি - এই চিকিৎসা পদ্ধতি ক্যান্সার কোষকে হত্যা করার জন্য ওষুধের ব্যবহারের সাথে জড়িত। গলা ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকেরা সাধারণত রেডিয়েশন থেরাপির সাথে কেমোথেরাপি ব্যবহার করেন।

আরো পড়ুনঃ মরণব্যাধি জলাতঙ্ক থেকে বাঁচার উপায় কি

সার্জারি - ক্যান্সারের অবস্থান এবং পর্যায়টি আপনার শরীরে গলার ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য আপনি বিবেচনা করতে পারেন এমন শল্য চিকিৎসার প্রক্রিয়াগুলি মূলত নির্ধারণ করে। সাধারণত এর চিকিৎসা পদ্ধতি গুলোর মাধ্যমে গলার ক্যান্সারের চিকিৎসা করা হয়।

আমাদের শেষ কথাঃ গলায় ক্যান্সারের লক্ষণ - গলায় ক্যান্সারের চিকিৎসা

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে গলায় ক্যান্সারের কারণসমূহ, গলায় ক্যান্সারের লক্ষণ, গলায় ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়, গলায় ক্যান্সারের চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। গলায় ক্যান্সার হলে অবশ্যই উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নিন। এই রোগে আক্রান্ত হলে অবশ্যই বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা উচিত।

আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আশা করি উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। যদি না পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে বিষয়গুলো জেনে নেবেন।২০৭৯১

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url