মৃত ব্যক্তির গোসলের পানি পাক না নাপাক

আমরা অনেকেই মৃত ব্যক্তির গোসলের পানি পাক না নাপাক? এ বিষয়টি সম্পর্কে জানিনা। কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে থাকে কবর দেওয়ার পূর্বে গোসল করানো হয়। মৃত ব্যক্তির গোসলের পানি পাক না নাপাক? এ ধরনের প্রশ্ন অনেকেই করে থাকে। আজকের এই আর্টিকেলে মৃত ব্যক্তির গোসলের পানি পাক না নাপাক? বিষয়টি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

তাহলে চলুন দেরি না করে ঝটপট মৃত ব্যক্তির গোসলের পানি পাক না নাপাক? বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

সূচিপত্রঃ মৃত ব্যক্তির গোসলের পানি পাক না নাপাক

মৃত ব্যক্তির গোসলের পানি পাক না নাপাকঃ ভূমিকা

কোন ব্যক্তি যখন মৃত্যুবরণ করে তখন সেই ব্যক্তিকে অনেক সুন্দর করে গোসল করে তারপরে কাফন পরিয়ে তাকে কবরস্থ করা হয়। সাধারণত প্রতিটি মুসলিম মারা গেলে এই কাজটি করা হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা মৃত ব্যক্তির গোসলের পানি পাক না নাপাক? সাধারণ তো অনেকের মনের ভেতরে এ ধরনের প্রশ্ন আসে।

আরো পড়ুনঃ আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে উক্তি - আল্লাহর উপর ভরসা নিয়ে উক্তি

আমরা যদি আমাদের সাধারণ জ্ঞান দিয়ে বিষয়টি চিন্তাভাবনা করি তাহলে অনেকেই কোন কুল কিনারা পায় না সাধারণত তাই গুগল অথবা কোন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। আজকের এই আর্টিকেলে মৃত ব্যক্তির গোসলের নিয়ম, মৃত ব্যক্তিকে কেন গোসল দেওয়া হয় এবং মৃত ব্যক্তির গোসলের পানি পাক না নাপাক? এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করব।

মৃত ব্যক্তির গোসলের নিয়ম

আমরা অনেকেই মৃত ব্যক্তিকে গোসলের নিয়ম সম্পর্কে জানি না। সাধারণত কোন মুসলমান ব্যক্তি যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন তাকে খুব সুন্দর করে গোসল করিয়ে কবরস্থ করা হয়। এর জন্য অবশ্যই সুন্নতি তরিকায় গোসল করাতে হবে এবং সেই গোসল হতে হবে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বলে দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী।

প্রথমে মৃত ব্যক্তিকে চৌকি অথবা খাটিয়ার উপরে শুইয়ে দিতে হবে। তারপরে পরনের কাপড় সরিয়ে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশে একটা কাপড় রেখে দিতে হবে। হাতে কাপড় পেঁচিয়ে প্রসাব পায়খানার জায়গা পরিষ্কার করতে হয়। মৃত ব্যক্তির পেশাব বা পায়খানা জাতীয় কিছু বের হলে গোসল কারীদের হাতে একটা ন্যাকড়া বেঁধে নিয়ে মৃত ব্যক্তির পায়খানা বা প্রসবের জায়গা ধুয়ে পরিষ্কার করতে হয়।

নাভি ও হাঁটুর মাঝখানে স্থান ঢেকে নিয়ে পানি ঢালবে। এর পরে ওযু করাতে হয়। নাকে ও মুখে পানি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তুলা ভিজিয়ে দাঁতের মাড়ি বা নাকের ভেতরে মুছে দেওয়া জায়েজ। গোসল ফরজ অবস্থায় মারা গেলে মুখে ও নাকে পানি পৌঁছানো জরুরী। পানি যেন ভেতরে না যায় সেজন্য নাক মুখ ও কানে তুলা দিয়ে দিতে হবে।

মৃত ব্যক্তিকে বামদিকে কাজ করিয়ে শুইয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত এমনভাবে তিনবার পানি ঢালতে হবে যেন বাম কাঁধ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। অনুরূপভাবে ডান কাঁধ করে শুয়ে তিনবার পানি ঢালতে হবে যেন মৃত ব্যক্তির ডান কাঁধ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এরপরে মৃত ব্যক্তিকে কিছুটা উপরে এস দিয়ে বসিয়ে আস্তে আস্তে পেটে চাবি দিতে হয়। কোন মল বের হলে পরিষ্কার করে ধুয়ে দিতে হয়।

এর জন্য আবার ওযু বা গোসল করানোর প্রয়োজন নেই। তারপর বাম কাঁধ করে শুইয়ে কপূর মিশানো পানি ঢালতে হয় তিনবার। সবশেষে একটি কাপড় দিয়ে সারা শরীর মুছে দিতে হয়। সাধারণত এভাবেই মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো হয়।

মৃত ব্যক্তিকে কেন গোসল দেওয়া হয়

মৃত ব্যক্তি মূলত আল্লাহতালার পথের যাত্রী। সেজন্য তাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা করে সাজিয়ে গুছিয়ে সেই পথে পাঠানো হয়। মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো কাফন পরানো এবং সুগন্ধি মাখানো অনেক বড় সওয়াবের কাজ। এই বিষয়ে অনেকগুলো হাদিস বর্ণিত রয়েছে। মৃত ব্যক্তিকে কেন গোসল দেওয়া হয় বিষয়টি সম্পর্কে জেনে নিন।

আরো পড়ুনঃ স্বপ্নে মৃত মানুষ দেখলে কি হয় ইসলামিক ব্যাখ্যা

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, " যে ব্যক্তি কোন মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়, কাফন পড়ায়, সুগন্ধি লাগিয়ে দেয়, খাটিয়া বহন করে, জানাযার নামাজ পড়ে এবং তার কোন দোষ জেনে সেগুলোকে গোপন করে রাখে সে ওই দিনের মতো পাপ থেকে মুক্ত হয়ে যায় যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছে"{ ইবনে মাজাহঃ ১৪৬২}

যেহেতু মৃত ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার পথের যাত্রী সেহেতু তাকে অপরিষ্কার নোংরা করে কখনোই খবর রাখা হয় না। সে যেন পাক পবিত্র হয়ে কবরে অবস্থান করতে পারে তাই মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া হয়। এরপরে কাফন পড়ানো হয় সুগন্ধি লাগানো হয়। সাধারণত মৃত ব্যক্তি যেন কবরে খুব সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে যেতে পারে সেই জন্যই এই কাজগুলো করা হয়।

মৃত ব্যক্তির গোসলের পানি পাক না নাপাক

ইসলামের দৃষ্টিতে কোন ব্যক্তির মারা গেলে তাকে গোসল দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। সাধারণত গোসল করার পর যে পানি থাকে অনেকের প্রশ্ন থাকে মৃত ব্যক্তির গোসলের পানি পাক না নাপাক? আবার কখনো কখনো দেখা যায় গোসলের পর মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে নাপাক বের হয়ে থাকে। তখন মানুষের মাঝে একটা বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

কেউ বলে প্রথম থেকে আবার গোসল করিয়ে দিলে আবার কেউ বলে শুধু অজু করালেই হবে। এই ক্ষেত্রে শরীয়ত যে কথাটি বলে আমাদের তা জানতে হবে। যদি মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর পরেও মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে নাপাক বের হয় তাহলে শুধু নাপাকি জায়গাটা ধুয়ে ফেললেই হবে আবার প্রথম থেকে গোসল করানোর প্রয়োজন নেই।

তাবেয়ি হযরত শাবা রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হাম্মাদকে জিজ্ঞেস করলাম, গোসলের পর মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে কোন কিছু নির্গত হলে কি করনীয়? তিনি উত্তরে বললেন সেই স্থানটা ধুয়ে ফেলতে হবে। {মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাঃ ১১০৩৯}

আরো পড়ুনঃ নবীর জানাজার নামাজ কে পড়ায়

বিখ্যাত তাবেয়ি হযরত হাসান বসরী রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, " মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে কোন কিছু বের হলে তা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। তাকে প্রথম থেকে আবার ওযু করানো বা গোসল করানোর প্রয়োজন নেই।"{ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাঃ ১১০৪০}

আমাদের শেষ কথাঃ মৃত ব্যক্তির গোসলের পানি পাক না নাপাক

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে মৃত ব্যক্তির গোসলের পানি পাক না নাপাক? মৃত ব্যক্তিকে গোসলের নিয়ম, নীতিবাকী কেন গোসল করা হয়? এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি জানতে পেরেছেন।

এই বিষয়টি একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের জানা উচিত। যদি বিষয়টি না জেনে থাকেন এবং না পড়ে থাকেন তাহলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন ধন্যবাদ। ২০৭৯১

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url