গ্রামে কি ব্যবসা করা যায় - গ্রামে কি ধরনের ব্যবসা করা যায়

আমরা যারা গ্রামে বসবাস করি তাদের অনেকের মনেই একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খায় আর তা হল গ্রামে কি ব্যবসা করা যায়, গ্রামে কি ধরনের ব্যবসা করা যায়, গ্রামে বসে কি করা যায়, গ্রামের বাড়িতে কি ব্যবসা করা যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই সেসব লোকের সুবিধার্থে আজ আমরা আলোচনা করব গ্রামে কি ব্যবসা করা যায়, গ্রামে কি ধরনের ব্যবসা করা যায়, গ্রামে বসে কি করা যায়, গ্রামের বাড়িতে কি ব্যবসা করা যায় তা নিয়ে।
চলুন আর দেরি না করে জেনে নেই গ্রামে কি ব্যবসা করা যায়, গ্রামে কি ধরনের ব্যবসা করা যায়, গ্রামে বসে কি করা যায়, গ্রামের বাড়িতে কি ব্যবসা করা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য।

পেজ সূচিপত্রঃ গ্রামে কি ব্যবসা করা যায় - গ্রামে কি ধরনের ব্যবসা করা যায়

গ্রামে কি ব্যবসা করা যায়

আমরা অনেকেই আছি যারা গ্রামে কোন কাজ নাই বিধায় শহরে পাড়ি জমাচ্ছি। আসলে কি এটা করা ঠিক? আমরা কেন শহরে না গিয়ে গ্রামে কিছু করতে পারছি না। আসলে তার কারণ হল আমরা গ্রামে কি করব তা ভেবে পায় না। কিন্তু আমরা চাইলেই গ্রামে বসে কিছু করে রোজগার করতে পারি। কিন্তু কি করব? তা জানাতেই মূলত আমাদের আজকের এই পোস্ট। চলুন গ্রামে কি ব্যবসা করা যায়, গ্রামে কি ধরনের ব্যবসা করা যায়, গ্রামে বসে কি করা যায়, গ্রামের বাড়িতে কি ব্যবসা করা যায় সেই  সম্পর্কে কিছু আইডিয়া দেখে নেই। 

কাঁচামালের ব্যবসা করে- শহরের সকল কাঁচামাল বা সবজি গ্রাম থেকে আসে। তাই আপনি যদি গ্রামে থাকেন তাহলে আপনার জন্য কাঁচামালের ব্যবসা হবে একটি উত্তম ব্যবসা। স্বল্প পুঁজিতে কাঁচামালের ব্যবসা করা যায় তাই আপনি যদি গ্রাম থেকে পাইকারি দামে কাঁচামাল কিনেন ও গ্রামেই খুচরা দামে বিক্রি করে ব্যবসা করতে পারেন। এছাড়াও আপনার যদি শহরের সাথে যোগাযোগ থাকে তাহলে আপনি গ্রাম থেকে কাঁচামাল কিনে শহরে পাইকারি দামে বিক্রি করে ভালো লাভবান হতে পারবেন।

ফার্মেসীর ব্যবসা- শহরে, গ্রামে সকল জায়গাতেই ঔষুধের চাহিদা ব্যপক। তাই আপনি গ্রামেই একটি ফার্মেসী বা ঔষুধের দোকান দিতে পারেন। এছাড়াও আপনি যদি একজন এমবিবিএস ডাক্তার হন তাহলে আপনি গ্রামে একটি চেম্বার দিতে পারেন। এতে করে গ্রামের মানুষ চিকিৎসার সুবিধা যেমন পাবে তেমনি আপনার ব্যবসাও ভালো হবে।

আচার ও পিঠা তৈরির ব্যবসা- আপনি যদি বাসায় খুব ভালো আচার বা পিঠা তৈরি করতে পারেন তাহলে আচার বা পিঠা অথবা দুইটাই তৈরি করে ব্যবসা করতে পারেন। আচার বা পিঠা তৈরি করে আপনাকে গ্রামেই বিক্রি করতে হবে এমন না। আপনি চাইলেই আপনার তৈরি আচার বা পিঠা শহরের বিভিন্ন দোকান অথবা অনলাইনে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারেন। কারণ এখন মানুষ দোকানের আচারের থেকে হাতে তৈরি আচার খেতে বেশী ভালোবাসে। আর মানুষ এখন এই ধরনের ব্যবসা করে অনেক স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে।

হস্ত শিল্পের কাজ করে- হাতে তৈরি বিভিন্ন জিনিস যেমন- নকশি কাঁথা, শীতল পাটি, মাটির পাত্র, গয়না বা অলঙ্কার, বেতের শিল্প, কাঠের তৈরি পণ্য, বাঁশের তৈরি পণ্য, পাটের পুতুল বা অন্যান্য পণ্য। যার চাহিদা এখনও আছে আর ভবিষ্যতেও থাকবে। এখন বর্তমানে এই হস্ত শিল্পের চাহিদা শহরে বেশী, তাই আপনি যদি চান তাহলে এই হস্ত শিল্পের মাধ্যমে আপনার ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এই কাজ করে আপনি নিজে যেমন স্বাবলম্বী হবেন তেমনি আপনার মাধ্যমে আরও অনেকেই অনুপ্রাণিত হবেন। এছাড়াও বর্তমানে হস্ত শিল্পের চাহিদা বিদেশেও বাড়ছে। 

মোবাইল লোড করে ও মেরামতের ব্যবসা করে- মোবাইল এখন ঘরে ঘরে। আর মোবাইল থাকলে তো মোবাইল লোড করা লাগে। এছাড়াও অনেক সময় মোবাইল নষ্ট হয়ে যায়। সেটি মেরামত করারও প্রয়োজন হয়। মোবাইল লোড ও মেরামতের জন্য সকলে সুদূর শহরে আসে। তাই আপনি গ্রামেই একটি মোবাইল লোড ও মেরামতের দোকান দিতে পারেন। এছাড়াও আপনি আপনার দোকানে চার্জার, হেড-ফোন, কভার ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের মোবাইলের সামগ্রী রাখতে পারেন, যাতে করে আর কাউকে কষ্ট করে মোবাইল লোড দিতে বা মোবাইল মেরামত করতে শহরে আসতে হবে না এবং আপনিও রোজগার করার একটি পথ খুঁজে পেলেন।

ট্রেনিং সেন্টার দিয়ে- আপনি যদি কম্পিউটার, হস্ত শিল্প, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াতে বা অন্য বিভিন্ন ধরনের যেকোন কাজ ভালো পারেন তাহলে আপনি গ্রামেই একটি ট্রেনিং সেন্টার দিতে পারেন। এবং সেন্টারটি অবশ্যই চেষ্টা করবেন বাজার বা স্কুল-কলেজের আশেপাশে দিতে। এতে করে আপনার ব্যবসার প্রচার খুব সহযেই হবে এবং মানুষ ভর্তি হতে আগ্রহী হবে। অবশ্যই আপনি যেই কাজটি ভালো পারেন ও অন্যকে খুব সহযেই বুঝাতে পারবেন সেই কাজটি দিয়েই ট্রেনিং সেন্টার খুলুন।

মুদি দোকান দিয়ে- মুদি দোকানের চাহিদা শহর, গ্রাম দুই জায়গাতেই আছে। তাই আপনি চাইলে খুব সহযেই গ্রামে মুদি দোকান দিতে পারেন। পাশাপাশি আপনি মোবাইল ফ্লাক্সিলোড, বিকাশ, নগদ, রকেটের কার্যক্রম চালু করতে পারেন। 

দর্জির দোকান দিয়ে- আপনি যদি খুব ভালো জামা-কাপড় বানাতে পারেন তাহলে গ্রামেই খুলে ফেলতে পারেন একটি দর্জির দোকান। কারণ গ্রামের লোকজনদেরও জামা-কাপড় বানানোর প্রয়োজন পরে। আর আপনি যদি দর্জির কাজ না জানেন তাহলে একজন কর্মচারী রাখতে পারেন। এছাড়াও আপনার দোকানে দর্জি কাজের পাশাপাশি নতুন জামা, জামার কাপড় বিক্রিও করতে পারেন। 
কৃষি পন্য বিক্রি করে- গ্রামের মানুষের প্রধান পেশা হল কৃষিকাজ। আপনি গ্রামে কৃষি কাজের পাশাপাশি কৃষিকাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের পন্য যেমন- বীজ, সার, কীটনাশক, কৃষিকাজের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ইত্যাদি পন্য বিক্রি করতে পারেন। এছাড়াও আপনি এসকল পন্য অনলাইন ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন পেজে পোস্ট করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করে আয় করতে পারেন।

খামার করে- আপনি যদি হাঁসমুরগি, গরুছাগল, কবুতর পালনে অভিজ্ঞ ও শৌখিন হন তাহলে আপনি একটি খামার করতে পারেন। এখানে আপনি অধিক যত্নের সাথে হাঁসমুরগি, গরুছাগল, কবুতর পালন করে দুধ ও ডীম বিক্রি করে রোজগার করতে পারেন। কিন্তু এই ব্যবসা করার আগে কিছুরা অভজ্ঞিতা অর্জন করা উচিত।

উপরে আমরা গ্রামে কি ব্যবসা করা যায়, গ্রামে কি ধরনের ব্যবসা করা যায়, গ্রামে বসে কি করা যায়, গ্রামের বাড়িতে কি ব্যবসা করা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। 

নতুন ব্যবসা শুরু করার পদ্ধতি? | গ্রামে কি ব্যবসা করা যায়

নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনাকে প্রথমে বিজনেস প্লান করতে হবে। আপনি কোন ধরনের ব্যবসা শুরু করবেন, আপনার কি কি রিসোর্স আছে, এই ব্যবসায় আপনার সুবিধা কি, ব্যবসার নিয়ম-কানুনের বিষয়ে জানতে ও প্লানিং করতে হবে। 
নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনাকে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। তা নিচে দেওয়া হল-
  • আপনি কি ধরনের ব্যবসা করতে চান সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোথায় আপনার দোকান, অফিস বা কারখানা দিবেন সেই জায়গা নির্ধারন করতে হবে।
  • ব্যবসা করার জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন যোগাড় করতে হবে।
  • আপনি একক ব্যবসা করবেন নাকি যৌথ ব্যবসা করবেন সেটা নির্ধারন করতে হবে। যদি আপনি যৌথ ব্যবসা করেন তাহলে আপনি আপনার পার্টনার হিসেবে কাকে নিবেন তা নির্ধারণ করতে হবে।
  • আপনার ব্যবসা শুরু করার জন্য একটি উপযুক্ত জমি ক্রয়, ভাড়া অথবা লীজ নিতে হবে।
  • আপনার ব্যবসাটা যে সরকার অনুমোদিত সেটা প্রমান করতে আপনাকে রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে।
  • শিল্প স্থাপন করতে হবে।
  • বিভিন্ন ধরনের ইউটিলিটি সার্ভিস যেমন- গ্যাস, পানি, বিদ্যুত, পয়ঃসংযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
  • ব্যবসার জন্য বিভিন্না ধরনের কাঁচামাল, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তি নির্বাচন করতে ও কিনতে হবে।
  • ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিতে হবে।
  • আপনার ব্যবসার পরিকল্পনা অনুযায়ী পন্য উৎপাদন ও বিপণন করতে হবে।

শেষ কথাঃ গ্রামে কি ব্যবসা করা যায় - গ্রামে কি ধরনের ব্যবসা করা যায়

বন্ধুরা, আজ আমরা গ্রামে কি ব্যবসা করা যায় - গ্রামে কি ধরনের ব্যবসা করা যায় তা নিয়ে একটি পোস্ট তৈরি করেছি। আমাদের এই পোস্টে গ্রামে কি ব্যবসা করা যায়, গ্রামে কি ধরনের ব্যবসা করা যায়, গ্রামে বসে কি করা যায়, গ্রামের বাড়িতে কি ব্যবসা করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যেই ব্যবসাই করুন না কেন অবশ্যই সেই ব্যবসাটা হতে হবে সৎ। আপনি যদি সৎভাবে কোন ব্যবসা শুরু করেন তাহলে তা হবে পরকালের জন্য উত্তম পুরুষ্কার। আর সৎ ভাবে আপনি যেইকোন ব্যবসায় করেন না কেন আপনি লাভবান হবেন।

আশাকরি, আমাদের এই গ্রামে কি ব্যবসা করা যায়, গ্রামে কি ধরনের ব্যবসা করা যায়, গ্রামে বসে কি করা যায়, গ্রামের বাড়িতে কি ব্যবসা করা যায় পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে এবং আপনারা উপকৃৎ হবেন। এই ধরণের আরও সুন্দর সুন্দর পোস্ট পেতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন, ধন্যবাদ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url