গ্রাম পুলিশের কাজ কি - গ্রাম পুলিশের প্রধান কে
গ্রাম পুলিশের কাজ কি, গ্রাম পুলিশের প্রধান কে, গ্রাম পুলিশ চাকরি কি সরকারি করা হয়েছে, গ্রাম পুলিশের অবসর বয়স, গ্রাম পুলিশের বেতন কত তা আমরা জানি না। সেটাই জানার জন্য আজকে আমাদের এই পোস্টটি করা।
চলুন দেখে নেওয়া যাক গ্রাম পুলিশের কাজ কি, গ্রাম পুলিশের প্রধান কে, গ্রাম পুলিশ চাকরি কি সরকারি করা হয়েছে, গ্রাম পুলিশের অবসর বয়স, গ্রাম পুলিশের বেতন কত সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
পেজ সূচিপত্রঃ গ্রাম পুলিশের কাজ কি - গ্রাম পুলিশের প্রধান কে
গ্রাম পুলিশের কাজ কি
গ্রাম পুলিশের কাজ হল বাংলাদেশ পুলিশকে সাহায্য সহযোগিতা করা ও গ্রামকে সুরক্ষা প্রদান করা। গ্রাম পুলিশ বাংলাদেশের একটি বিশেষায়িত পুলিশ। গ্রাম পুলিশ বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর মত না। এদের কাজ দিনে রাতে এলাকা বা মহল্লায় টহলদারী করা। এছাড়াও গ্রাম পুলিশের কাজ গ্রামে বা মহল্লার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন- গ্রাম বা মহল্লায় কোন প্রকার হাঙ্গামা, মারামারি, জমি দখল, জন্ম, মৃত্যু রেজিস্টার, অপরাধীকে ধরা ইত্যাদি কাজ করে থাকে গ্রাম পুলিশ। গ্রাম পুলিশ ২ প্রকার- (১) দফাদার (২) মহল্লাদার।
গ্রাম পুলিশের প্রধান কে
গ্রাম পুলিশের প্রধান হল মহল্লাদার ও দফাদারের ম্যাজিস্ট্রেট।
গ্রাম পুলিশের ক্ষমতা ও কার্যাবলী
গ্রাম পুলিশকে কি ধরনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ও গ্রাম পুলিশ কি কাজ করতে পারবে তা নিচে বিস্তারিতভাবে দেওয়া হল।
- গ্রাম পুলিশ দিনে অথবা রাতে গ্রাম বা একটি ইউনিয়ন পাহারা দিবেন ও টহলদারী করবেন।
- কোন অপরাধী যখন অপরাধ করবে তখন তার অনুসন্ধান করবে ও অপরাধ দমন করতে পুলিশকে সাহায্য করবে।
- গ্রাম পুলিশ গ্রামের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদকে সাহায্য করবে।
- প্রতি ১৫ দিন পর পর এলাকার সকল তথ্য সংশ্লিষ্ট ভারপ্রাপ্ত পুলিশকে জানাবেন।
- গ্রাম ইউনিয়নে সন্দেহজনক কেউ লুকিয়ে থাকলে বা তার সঠিক পরিচয় দেয় না এমন লোক সম্পর্কে থানায় রিপোর্ট প্রদান করবে।
- এলাকার খারাপ চরিত্রের লোক ও অন্য এলাকা থেকে আসা কোন সন্দেহজনক লোক সম্পর্কে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানাবেন।
- এলাকায় দাঙ্গা, হাঙ্গামা, বিরোধ, কলহ সৃষ্টি করে এলাকাবাসী শান্তি নষ্ট করে এমন বিষয় সম্পর্কে থানায় জানাতে হবে। এছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরনের অপরাধ যেমন- দাংগা- হাংগামা, গোপনে কোন মৃত দেহ লুকিয়ে রেখে জন্ম সংক্রান্ত সকল তথ্য গোপন, আগুনের মাধ্যমে কোন ক্ষতি সংঘটিত হলে, কারও গবাদি পশুকে বিষের মাধ্যমে ক্ষতি করলে, শিশুকে বাড়ি থেকে বের করে মৃত্যু বা ক্ষতির মুখে ঠেলে দিলে এই সকল কাজ যদি গ্রামে বা এলাকায় সংঘটিত হয় তাহলে থানার উর্ধতন কর্মকর্তাকে জানাতে হবে।
- গ্রাম পুলিশ তথা মহল্লাদার অথবা দাফাদার ম্যাজিস্ট্রেটের হুকুম বা ওয়ারেন্ট ছাড়া তাদের গ্রেফতার করতে পারবেন যারা- হাজত থেকে পালিয়ে গ্রামে এসে আশ্রয় নেয়, আদালত আগ্রাহ অপরাধ করে, চোরাই মাল বা বিভিন্ন ধরনের সিধেল যন্ত্র লুকিয়ে রাখে।
- গ্রাম পুলিশ সরকারি কাজের জন্য যে কোন ধরনের স্থানীয় তথ্য সরবরাহ করে।
- রাজস্ব কর্মচারীদের খাজনা বা ভূমি সংক্রান্ত উন্নয়ন কর, স্থানীয় কর ফি অথবা পাওনা সংগ্রহে সাহায্য সহযোগিতা করবে।
গ্রাম পুলিশ চাকরি কি সরকারি করা হয়েছে?
দফাদার ও মহল্লাদার মিলে সারাদেশে গ্রাম পুলিশে সংখ্যা মোট ৪৬ হাজার। এদের মধ্যে দফাদারের মাসিক বেতন মাত্র ৩৪০০/- টাকা ও মহল্লাদারের বেতন মাত্র ৩০০০/- টাকা। যেহেতু গ্রাম পুলিশের চাকরি সরকারি হয়নি তাই তাদের অর্ধেক বেতন সরকারি কোষাগার থেকে ও বাকি অর্ধেক বেতন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনঃ পাঙ্গাস মাছ খাওয়ার উপকারিতা
গ্রাম পুলিশেরা অনেক আগে থেকে তথা ব্রিটিশ আমল থেকে বিভিন্ন আইনের অধীনে কাজ করছে। গ্রাম পুলিশ ২৪ ঘন্টা কাজ করে দিনে ৩০০ টাকা আয় করছে। তাই স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ আইন ২০০৯ সালের ন্তভূক্ত করেন। এই আইনের অধীনেই ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার গ্রাম পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ, গঠন, শৃংখলা ও শর্তাবলীর বিধিমালা তৈরি করেন।
কিন্তু উক্ত বিধিতে কোন শ্রেনী উল্লেখ করা না হওয়ায় গ্রাম পুলিশেরা শ্রেনী দাবি করেন এবং সেই দাবির প্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে স্থানীয় সরকার গ্রাম পুলিশকে ৪র্থ শ্রেনীর স্কেল নির্ধারনের জন্য অর্থ বিভাগকে চিঠিদেয়। তারপর আবার ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল হাইকোর্টে গ্রাম পুলিশদের জন্য বেতন স্কেল ১৯ ও ২০ তম গ্রেড দেওয়ার রায় দেন। চূড়ান্ত রায়ে ২০১১ সালের জুন মাস থেকে ১৯ তম গ্রেডে দফাদার ও ২০ তম গ্রেডে মহল্লাদারদের বেতনের কথা বলেন এবং ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসের ২৬ তারিখ থেকে তা কার্যকর করা হয়।
গ্রাম পুলিশের অবসর বয়স
আগে সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়স ছিল ২৫ বছর আর অবসর বয়স ছিল ৫৫ বছর। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স করা হয় ২৭ বছর আর অবসর ৫৭ বছর। এই প্রক্রিয়াটি ২০ বছর ধরে চলে। কিন্তু ১৯৮০ সালের দিকে বিশ্ববিল্যালয়ের সেশন জটের কারণে শিক্ষার্থীরা ২৭ বছর বয়সের মধ্যে বিশেষ স্নাতকোত্তন শিক্ষা শেষ করতে পারছিল না তাই নতুন সরকার ১৯৯১ সালে ১৩ তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে ৩ বছর বাড়িয়ে প্রবেশের বয়স ৩০ বছর করেন কিন্তু অবসর ৫৭ বছরই থেকে যায়।
তারপর ২০১২ সালে অবসরের সময় বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়। তারপর অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই আবার অবসর সময় ৬০ বছর করা হয়।
গ্রাম পুলিশের বেতন কত
আগে গ্রাম পুলিশের বেতন ছিল দফাদারের ৩৪০০ টাকা ও মহল্লাদারের ৩০০০ টাকা। কিন্তু ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসের ২৬ তারিখে গ্রাম পুলিশের বেতন দফাদারের ১৯ তম গ্রেডে ৫০,০০০/- ও মহল্লাদারের ২০ তম গ্রেডে ৬০,০০০/- তে উন্নিত করা হয়।
শেষ কথাঃ গ্রাম পুলিশের কাজ কি - গ্রাম পুলিশের প্রধান কে
বন্ধুরা, আজ আমরা গ্রাম পুলিশের কাজ কি - গ্রাম পুলিশের প্রধান কে তা নিয়ে একটি নিবন্ধ তৈরি করেছি। আমাদের এই পোস্টে গ্রাম পুলিশের কাজ কি, গ্রাম পুলিশের প্রধান কে, গ্রাম পুলিশ চাকরি কি সরকারি করা হয়েছে, গ্রাম পুলিশের অবসর বয়স, গ্রাম পুলিশের বেতন কত তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি আমাদের এই গ্রাম পুলিশের কাজ কি, গ্রাম পুলিশের প্রধান কে, গ্রাম পুলিশ চাকরি কি সরকারি করা হয়েছে, গ্রাম পুলিশের অবসর বয়স, গ্রাম পুলিশের বেতন কত পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে এবং আপনারা উপকৃত হবেন। এই ধরনের আরও পোস্ট পেতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন, ধন্যবাদ।