বাড়ির ছাদে দেশি মুরগি পালন - বাড়ির ছাদে কবুতর পালন

আজকাল বাড়ির ছাদে বাগান করা, শাকসবজি চাষ সহ আরও বিভিন্ন কাজ করা হয়ে থাকে। তাই আজ আমরা বাড়ির ছাদে আরও কি কি কাজ করা যায় সে সম্পর্কে লিখব। এখন মানুষ তাদের বাড়ির ছাদে দেশি মুরগি পালন, বাড়ির ছাদে কবুতর পালন, বাড়ির ছাদে হাঁস পালন, বাড়ির ছাদে মাছ চাষ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।
চলুন আর দেরি না করে বাড়ির ছাদে দেশি মুরগি পালন, বাড়ির ছাদে কবুতর পালন, বাড়ির ছাদে হাঁস পালন, বাড়ির ছাদে মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

পেজ সূচিপত্রঃ বাড়ির ছাদে দেশি মুরগি পালন - বাড়ির ছাদে কবুতর পালন

বাড়ির ছাদে দেশি মুরগি পালন

বাংলাদেশে এখন বিভিন্ন জাতের মুরগি পালন করা হয়। তার মধ্যে হাইব্রিড জাতের মুরগি ১৮ থেকে ২০ সপ্তাহ বয়স হওয়ার পর থেকে শুরু করে ৭২ থেকে ৮৪ সপ্তাহ পর্যন্ত ডিম দেয় এবং বছরে মোট ২৮০ থেকে ৩৩০টি ডিম দেয়। মুরগি পালন পদ্ধতিটিকে মোট ২ ভাগে ভাগ করা হয়। 
  • বাচ্চা মুরগি পালন
  • বয়স্ক মুরগি পালন
বাচ্চা মুরগি পালনঃ-
বাচ্চা মুরগি পালন পদ্ধতিকে আবার ২ ভাবে ভাগ করা হয়, তা হল- 
  • ব্রুডিং পর্ব ও 
  • গ্রোয়িং পর্ব
ব্রুডিং পর্ব হল বাচ্চা মুরগির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। ১ থেকে ৩৫ দিনের বাচ্চার এই সময়কে ব্রুডিং পর্ব বলে। এই সময় বাচ্চা মুরগিদের সঠিক যত্ন নিতে হয়।

গ্রোয়িং পর্ব হল বাচ্চা মুরগির বৃদ্ধি পর্ব। তাই এই সময় বাচ্চা মুরগিদের সঠিক যত্ন দিতে হবে। কারণ এই সময়ের সঠিক যত্নই বাচ্চা মুরগিদের বৃদ্ধি ও ভবিষ্যৎ উৎপাদন নির্ভর করে। বাচ্চা মুরগির গ্রোয়িং পর্বের সময়সীমা ৩৫ থেকে ৭২ দিন পর্যন্ত।

বয়স্ক মুরগি পালনঃ-
আপনি যদি ছাদের অল্প জায়গায় মুরগি পালন করতে চান তাহলে আপনার বয়স্ক মুরগি পালন করা ভালো। বয়স্ক মুরগির বয়স ৭২ তম দিন থেকে ১.৫ বছর পর্যন্ত। এ ক্ষেত্রে আপনি অন্য খামার থেকে মুরগি কিনতে পারবেন। 

মুরগি পালনের পদ্ধতি- মুরগি পালনের অনেকগুলো পদ্ধতি আছে তার মধ্যে ছাদে মুরগি পালনের অন্যতম পদ্ধতি হল ব্যাটারি বা খাচা পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে খাচার মধ্যে মুরগি পালন করা হয়। আর এই খাচাগুলো কতটি মুরগি তার উপর নির্ভর করে একতল বা বহুতল নির্মান করা হয়। আর এই পদ্ধতিতে খাচা তৈরি করলে জায়গাও কম লাগে এবং মুরগি রোগে কম আক্রান্ত হয়। ডিম পাড়া মুরগির জন্য এটি সবচেয়ে ভালো একটি পদ্ধতি।

বাড়ির ছাদে কবুতর পালন | বাড়ির ছাদে দেশি মুরগি পালন

মুরগি, হাঁস, মাছের মত বাড়ির ছাদে কবুতরও পালন করা যায়। ছাদে কবুতর পালন করার জন্য আপনাকে ছাদের দেয়ালের সাথে কবুতরের থাকার ঘর তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে মনে রাখতে হবে প্রতি ১ জোড়া কবুতরের জন্য ২ টি ঘর দরকার। আপনি যেকোন কাঠ মিস্ত্রির মাধ্যমে কবুতরের থাকার জন্য ঘর তৈরি করতে পারবেন। কবুতরের ঘর যেন সবসময় ঠান্ডা থাকে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

কবুতরকে বাড়ি চেনানো- কবুতরকে বাড়ি চেনাতে হবে যেন কবুতর অন্য কোথাও চলে না যায়। বাড়ি চেনানোর জন্য কবুতরকে ১০ থেকে ১২ দিন কবুতরেরে খোপে আটকিয়ে রাখতে হবে। আর এমনভাবে রাখতে হবে যাতে করে কবুতর খোপের ভেতর থেকে বাইরের সব কিছু ভালো করে দেখতে পারে। 

কবুতরের খাবার- কবুতরকে নিয়মিত খাবার ও পানি খেতে দিতে হবে। দেশী কবুতর ধান, চালের খুদ, গম খেতে পছন্দ করে। আবার সরিষা, জব, কাউন ও খাওয়ানো যেতে পারে। কবুতরের খাবার অবশ্যই শুকনো হতে হবে। ভিজা খাবার কবুতরকে কোনভাবেই দেওয়া যাবে না। 
কবুতরের পরিচর্যা- আপনার কবুতরের যদি মাঠ বা খোলা জায়গা থেকে খাবার সংগ্রহ করার অভ্যাস না থাকে তাহলে অবশ্যই তা খাবারে যান পর্যাপ্ত পরিমান প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কবুতরের ঘর সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কবুতরের গোসলের ব্যবস্থা করতে ও কবুতরকে দিনে ২ বার আকাশে উড়ার সুযোগ করে দিতে হবে।

বাড়ির ছাদে হাঁস পালন | বাড়ির ছাদে দেশি মুরগি পালন

আজকাল বাড়ির ছাদে হাঁস, মুরগি, কবুতর পালন, মাছ চাষ সহ বিভিন্ন গাছ-পালা, শাকসবজি চাষ করা হচ্ছে। বাড়ির ছাদে হাঁস পালন করার এখন উপযুক্ত সময়। কারণ এখন সকল জলাশয়, পুকুর সকল কিছু ভরাট করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও পুকুরের পানিতে বিভিন্ন কিটনাশক, মিল-কারখানার পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে যার ফলে হাঁস গুলো বিভিন্ন ধরনের অসুখে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। এতে করে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশী হচ্ছে। তাই সকলে বাড়ির ছাদে হাঁস পালন করার কথা ভাবছেন এবং সফলও হচ্ছেন। 

বাড়ির ছাদে হাঁস পালন করার জন্য ছাদের উপর হাসের জন্য ছোট ছোট জলাশয় তৈরি করতে হবে যাতে করে হাঁসেরা সেখানে সাতার কাটতে পারে। এতে করে হাসের রোগ-বালাই কম হয়। এছাড়াও ছাদের উপরে হাঁস থাকার জন্য ঘর তৈরি করতে হবে। যেখানে একসাথে অনেক গুলো হাঁস থাকতে পারবে। এভাবে হাঁস পালন করলে মাসে অনেক টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। কারণ হাসের খাবার কম লাগে এবং কম জায়গাতে হাঁস পালন করা যায়। আবার হাসের ডিম বিক্রি করে ও বয়স্ক হাঁস বিক্রি করে টাকা ইনকাম করা যায়।

বাড়ির ছাদে মাছ চাষ পদ্ধতি | বাড়ির ছাদে দেশি মুরগি পালন

বাড়ির ছাদে মাছ চাষ করার প্রযুক্তির নাম হল বায়োফ্লক। এই বায়োফ্লক হল একপ্রকার প্রোটিনসমৃদ্ধ জৈব পদার্থ ও বিভিন্ন ধরনের অণুজীবের সমষ্টি। এই অণুজীব হল একটি উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা পানিতে উচ্চ কার্বন নাইট্রোজেন অনুপাত নিশ্চিত করে এবং ক্ষতিকর অ্যামেনিয়া অণুজীব আমিষে রূপান্তর হয়। এই অণুজীবকে মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

বাড়ির ছাদে মাছ চাষ করার জন্য প্রথমে একটি ট্যাঙ্কে অথবা চৌবাচ্চা আপনি যেখানে মাছ চাষ করবেন সেখানে পানি দিন ও ১ সপ্তাহ সেই পানিতে অক্সিজেন সরবরাহ করুন। যদি এই পানিতে আয়রন অথবা অন্য কোন প্রকার পদার্থ থাকে তাহলে সেটা পানির উপরে জমা হবে। এবার প্রতি ১ লিটার পানিতে ১ কেজি আয়োডিনমুক্ত লবণ দিতে হবে। তারপর টিডিএস যখন ১২০০ এর উপরে হবে তখন প্রতি ১ হাজার লিটার পানিতে ১০ গ্রাম চুন দিতে হবে। 

পানিতে কার্বনের উৎসের জন্য ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম দিতে হবে চিটাগুড় এবং সবসময়ের জন্য পানিতে অক্সিজেন সরবরাহ করে রাখতে হবে। এসকল কিছু করার ২ সপ্তাহ পরে এই পানিতে বায়োফ্লক (যেমন- ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া, শৈবাল, ডায়াটম) তৈরি হবে। পানিতে যখন ৩০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার বায়োফ্লক তৈরি হবে তখনই সেই পানিতে মাছ ছাড়া যাবে। ছাদে মাছ চাষ করার ও উৎপাদন ভালো হওয়ার জন্য নিয়মিত উপকারী ব্যাকটেরিয়ার উৎস, নিয়মিত পানির গুণাগুণ পরীক্ষা, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং সর্বদা বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

শেষ কথাঃ বাড়ির ছাদে দেশি মুরগি পালন - বাড়ির ছাদে কবুতর পালন

বন্ধুরা, আজ আমরা বাড়ির ছাদে দেশি মুরগি পালন - বাড়ির ছাদে কবুতর পালন নিয়ে একটি নিবন্ধ তৈরি করেছি। আমাদের এই বাড়ির ছাদে দেশি মুরগি পালন - বাড়ির ছাদে কবুতর পালন পোস্টে বাড়ির ছাদে দেশি মুরগি পালন, বাড়ির ছাদে কবুতর পালন, বাড়ির ছাদে হাঁস পালন, বাড়ির ছাদে মাছ চাষ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

আশাকরি, আমাদের এই বাড়ির ছাদে দেশি মুরগি পালন, বাড়ির ছাদে কবুতর পালন, বাড়ির ছাদে হাঁস পালন, বাড়ির ছাদে মাছ চাষ পদ্ধতি পোস্টটি পড়ে আপনাদের ভালো লাগবে এবং আপনারা উপকৃত হবেন। এই ধরনের আরও নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন, ধন্যবাদ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url