তুলসী পাতার উপকারিতা - তুলসী পাতার অপকারিতা

তুলসী আমাদের জন্য খুবই উপকারী একটি গাছ। এটি এক ধরনের ঔষুধি গাছ। আমাদের জীবনযাত্রার বিভিন্ন প্রয়োজনে তুলসী খুবই উপকারী। আজ আমরা আমাদের আজকের নিবন্ধটিতে তুলসী পাতার উপকারিতা, তুলসী পাতার অপকারিতা, তুলসী পাতার ব্যবহার, তুলসী পাতার ঔষুধি গুনাগুন, তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আলোচনা করব।
চলুন আর দেরি না করে তুলসী পাতার উপকারিতা, তুলসী পাতার অপকারিতা, তুলসী পাতার ব্যবহার, তুলসী পাতার ঔষুধি গুনাগুন, তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

পেজ সূচিপত্রঃ তুলসী পাতার উপকারিতা - তুলসী পাতার অপকারিতা

তুলসী পাতার উপকারিতা

তুলসী পাতার বেশ কিছু উপকারিতা আছে। যা আমাদের সকলের জন্যই প্রয়োজন। তুলসী আমাদের অনেক রকমের অসুখ-বিসুখ থেকে দূরে রাখে। চলুন তুলসী পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই।

সর্দি-কাশি কমাতে সাহায্য করে - তুলসী পাতা সর্দি-কাশি কমাতে সাহায্য করে। আপনার যদি ঠান্ডা লেগে বুকে কফ জমে যায় তাহলে তুলসী পাতা, আদা দিয়ে চা বানিয়ে মধু ও লেবু মিশিয়ে পান করুন। এতে করে অনেক তাড়াতাড়ি আপনি সর্দি-কাশি থেকে আরাম পাবেন।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে- একটি মরণঘাতি অসুখের নাম ক্যান্সার। তুলসী পাতা এই মরণঘাতি অসুখের থেকে দূরে রাখে। টিউমারের কোষগুলোকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে রেডিওপ্রটেকটিভ উপাদান যা তুলসী পাতায় পাওয়া যায়। এছাড়াও তুলসী পাতায় আছে ফাইটোকেমিক্যাল যেমন- মাইরেটিনাল, এপিজেনিন, লিউটিউলিন, রোসমারিনিক এসিড। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে এই সকল উপাদান কাজ করে। তুলসী পাতা ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে ও সহায়তা করে। তাছাড়া আপনার অগ্নাশয়ে টিউমার কোষ দূর করতেও দারুণ ভূমিকা রাখে এই তুলসী পাতা।

ওজন কমাতে সাহায্য করে- তুলসী পাতা রক্তের সুগারের মাত্রা ও কোলেস্টরল রোধ করতে সাহায্য করে যার ফলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সাম্প্রতিকালে তুলসী পাতা দিয়ে ঔষুধ তৈরি করে সেবন করা হচ্ছে যা ওবেসিটি ও লিপিড প্রোফাইল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

ডায়বেটিস দূরে রাখতে সাহায্য করে- ডায়বেটিস রোগীদের জন্য তুলসী পাতা ইনসুলিনের কাজ করে। প্রতিদিন খালি পেটে তুলসী পাতা খেলে রক্তের সুগারের মাত্রা কমে। এটি অ্যান্টি ডায়াবেটিক ঔষুধের কাজ করে এবং তুলসীতে থাকা স্যাপোনিন, ত্রিতারপিনিন ও ফ্ল্যাবোনয়েড যা ডায়বেটিক রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

গলা ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করে- তুলসী পাতা গলা ব্যাথা সমস্যা দূর করতে বেশ কার্যকরী। এছাড়াও শ্বাসকষ্টের সমস্যা মোকাবেলা করতে ও দারুন ভূমিকা রাখে তুলসী পাতা। তুলসী পাতা সহ পানি ফুটিয়ে গার্গল করলে গলা ব্যাথা থেকে খুব সহযেই মুক্তি পাওয়া যায়।

রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে- ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা ও ফুস্ফুসের সমস্যার মত রোগ প্রতিরোধ করতে তুলসী পাতা বেশ উপকারী। এছাড়াও তুলসী পাতা জ্বর সারাতেও বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তুলসী পাতা, এলাচ পানিতে মিশিয়ে ফুটিয়ে পান করলে সকল ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও তুলসী পাতা বেটে ক্ষত স্থানে লাগালে দ্রুত ক্ষত শুকায়।

তুলসী পাতার অপকারিতা | তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক

তুলসী পাতার যেমন উপকারিতা আছে তেমনিভাবে তুলসীর বেশ কিছু অপকারিতা ও আছে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি তুলসী পাতার ব্যবহার আমাদের জীবনে নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। নিচে তুলসী পাতার অপকারিতা দেওয়া হল-

রক্ত পাতের সমস্যা- তুলসী পাতা বেশী পরিমানে খেলে শরীরের রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়। যার ফলে শরীরের স্বাভাবিক রক্ত জমাট হওয়ার প্রবণতা নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে অতিরিক্ত পরিমানে রক্তপাত হতে পারে। তাই আপনার যেকোন ধরনের সার্জারির অন্ত্যত ২ সপ্তাহ আগে থেকে তুলসী পাতা খাওয় বন্ধ করতে হবে।
নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা- আপনার যদি নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা থাকে তাহলে আপনার জন্য তুলসী পাতা না খাওয়াই ভালো। কারণ তুলসী পাতাতে আছে অতিরিক্ত পটাশিয়াম যা রক্তচাপ কমায়। তাই নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা থাকলে তুলসী পাতা খাওয়া থেকে দূরে থাকবেন এছাড়া অন্যান্য সকল সমস্যায় তুলসী খেতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যপানে সমস্যা- আপনি যদি গর্ভবতী হন অথবা আপনার বাচ্চা বুকের দউধ পান করে এমন হয় তাহলে আপনার তুলসী পানা না খাওয়াই ভালো। কারণ এই সময় তুলসী পাতা খেলে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত তুলসী পাতা কোন নারী খেলে তার বন্ধ্যা ও হতে পারে। তাই তুলসী পাতা পরিমিত আকারে গ্রহণ করাই উত্তম।

বমি, জ্বলাভাব, ঝিমুনি সমস্যা- তুলসী পাতা অতিরিক্ত পরিমানে খেলে হতে পারে বমি, গলা জ্বলা ও ঝিমুনি হতে পারে। 

তুলসী পাতার ব্যবহার

উপরে আমরা তুলসী পাতার উপকারিতা ও তুলসী পাতার অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করলাম। এখন আমরা দেখব তুলসী পাতার ব্যবহার সম্পর্কে। তুলসী পাতা বিভিন্ন ধরনের কাজে ব্যবহার করা যায়। চলুন আর দেরি না করে তুলসী পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেই।
  • তুলসী পাতা কাঁচা অবস্থায় চিবিয়ে খেতে পারেন।
  • তুলসী পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
  • তুলসী পাতার রস আদা ও মধু দিয়ে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • তুলসী পাতার রস, বেসন ও কাঁচা হলুদ একসাথে মিশিয়ে মুখে বা ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন।
  • মুখের দাগ দূর করতে তুলসী পাতার রস, বেসন মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
  • কুসুম গরম পানিতে তুলসী পাতা ফুটিয়ে পানি খেতে পারেন। 
  • তুলসী পাতা ও চা পাতা দিয়ে চা বানিয়ে তুলসির চা খেতে পারেন।
  • ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ফুটন্ত গরম পানিতে তুলসী পাতা দিয়ে সেই পানির ভাপ মুখে নিতে পারেন।
  • তুলসী পাতা, মুলতানি মাটি, নিমপাতা, লবঙ্গ, চন্দন ও সামান্য কর্পূর দিয়ে ফেস প্যাক তৈরি করে মুখে ব্যবহার করতে পারেন।
  • তুলসী পাতার রস, ময়দা, দুধ, কাঁচা হলুদ, ও জাফরান একসাথে মিশিয়ে হাতে-পায়ে লাগান। এতে করে হাত-পায়ের কালো দাগ দূর হয়।

তুলসী পাতার ঔষুধি গুনাগুন

তুলসী পাতার উপকারিতা, তুলসী পাতার অপকারিতা, তুলসী পাতার ব্যবহার এর পর এখন আমরা তুলসী পাতার ঔষুধি গুনাগুন নিয়ে আলোচনা করব। নিচে তুলসী পাতার ঔষুধি গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হল।
  • সর্দি, কাশি, গলা ব্যাথায় তুলসী পাতা খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  • চর্মরোগ থেকে মুক্তি দেয় তুলসী পাতা। গোসলের সময় গোসল করার পানিতে কিছু পরিমান তুলসী পাতা দিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে কোন প্রকার চর্মরোগ হয় না।
  • তুলসী পাতা সারা বছর ধরে খেলে কোন প্রকার রোগ-বালাই হবে না।
  • দাঁতের পোকার সমস্যা দূর করতে তুলসী পাতা বেশ কার্যকরী। তুলসী পাতা চিবালে দাঁতের পোকা ধরে না, দাঁত থাকে মুজবুত, উজ্জ্বল ও দীর্ঘস্থায়ী।
  • তুলসী পাতা ব্রংকাইটিস ও ডায়রিয়া রোগের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও গরমের দিনে কেউ না ঘামলে ঘাম ঝরাতে সাহায্য করে তুলসী পাতা। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ, চুলকানীতে তুলসী পাতা বাটা বা রস গরম করে লাগালে চুলকানী বা বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ ভালো হয়।
  • চোখ ওঠা রোগে তুলসী পাতার রস কাজলের মত করে লাগালে বা তুলসীর রসের সাথে মধু মিশিয়ে চোখে লাগালে চোখ ওঠা রোগ ভালো হয়।
  • যদি আপনি গর্ভবতী হন এবং আপনার গর্ভাশয়ের সমস্যা বা গর্ভপাত হয় তাহলে ২৫ গ্রাম তুলসী গাছের বীজ ্বেটে খান এতে করে উপকার পাবেন।
  • জন্ডিসে তুলসী খুবই উপকারী। যদি আপনার জন্ডিস হয় তাহলে ১০ গ্রাম তুলসী পাতার রস ও ৫০ গ্রাম তুলসীর মূলের রস একসাথে মিশিয়ে খেলে জন্ডিস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এই পদ্ধতিটি দিনে ৩ বার করে ১ মাস পর্যন্ত খেতে হবে। এটি গ্রহন করলে রোগীর দেহের রক্ত স্বল্পতা দূর হবে এবং শরীরের হলদেটে ভাব দূর হবে।
  • শরীরের অন্ডকোষ যদি টন টন করে বা ব্যাথা করে তাহলে ৪ তোলা তুলসীর পাতার রসের সাথে ৪ তোলা পরিমান মিছরির গুড়া মিশিয়ে খেলে অন্ডকোষের যন্ত্রনা কমে যাবে।

শেষ কথাঃ তুলসী পাতার উপকারিতা - তুলসী পাতার অপকারিতা

বন্ধুরা, আজ আমরা তুলসী পাতার উপকারিতা - তুলসী পাতার অপকারিতা নিয়ে একটি নিবন্ধ তৈরি করেছি। আমাদের এই তুলসী পাতার উপকারিতা - তুলসী পাতার অপকারিতা নিবন্ধটিতে তুলসী পাতার উপকারিতা - তুলসী পাতার অপকারিতা, তুলসী পাতার ব্যবহার, তুলসী পাতার ঔষুধি গুনাগুন, তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

আশাকরি, আমাদের এই তুলসী পাতার উপকারিতা - তুলসী পাতার অপকারিতা, তুলসী পাতার ব্যবহার, তুলসী পাতার ঔষুধি গুনাগুন, তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে এবং আপনারা উপকৃত হবেন। এই ধরনের আরও সুন্দর ও নতুন পোস্ট পেতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন, ধন্যবাদ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url