তুলসী পূজার নিয়ম - তুলসী পূজা করার নিয়ম - তুলসী পূজার মন্ত্র

আমরা সকলেই তুলসী পাতার নানা রকম উপকার, গুনাগুন সম্পর্কে জানি। কিন্তু তুলসী যে শুধু বিভিন্ন রোগের উপকারই করে না, হিন্দুরা তুলসী গাছকে পূজাও করে। তাই আজ আমরা আমাদের পোস্টে তুলসী পূজার নিয়ম - তুলসী পূজা করার নিয়ম - তুলসী পূজার মন্ত্র, তুলসী পূজা কেন করা হয়, তুলসী পূজা পদ্ধতি, তুলসী জলদান মন্ত্র, তুলসী প্রণাম মন্ত্র, তুলসী স্নান মন্ত্র, তুলসী প্রদক্ষিণ মন্ত্র সম্পর্কে জানব।

চলুন আর দেরি না করে তুলসী পূজার নিয়ম - তুলসী পূজা করার নিয়ম - তুলসী পূজার মন্ত্র, তুলসী পূজা কেন করা হয়, তুলসী পূজা পদ্ধতি, তুলসী জলদান মন্ত্র, তুলসী প্রণাম মন্ত্র, তুলসী স্নান মন্ত্র, তুলসী প্রদক্ষিণ মন্ত্র কি তা জেনে নেই।

পেজ সূচিপত্রঃ তুলসী পূজার নিয়ম - তুলসী পূজা করার নিয়ম - তুলসী পূজার মন্ত্র

তুলসী পূজার নিয়ম | তুলসী পূজা করার নিয়ম

হিন্দুদের কাছে তুলসী গাছের বিরাট ভূমিকা আছে। তুলসী গাছের ঔষুধি গুনাগুন অনেক বেশী। হিন্দুরা মনে করেন তুলসী ছাড়া তাদের ভগবান বিষ্ণুর সেবা অপূর্ণ থাকে। তুলসী পূজা করলে মনোষ্কামনা পূর্ণ হয়। নিচে তুলসী পূজার নিয়ম দেওয়া হল-
  • তুলসী গাছের চারা বাড়ির ঊঠানে লাগাতে হবে, যদি বাড়িতে উঠান না থাকে সেক্ষেত্রে ব্যালকনিতে তুলসী গাছ লাগাতে পারেন।
  • প্রতিদিন সকালে গোসল করে তুলসী গাছে পানি দিতে হবে এবং চারদিকে প্রদক্ষিণ করতে হবে।
  • গনেশ, দূর্গা ও শিব ঠাকুরকে তুলসী দিতে হবে।
  • তুলসী তলায় রবিবারের দিনে প্রদীপ জ্বালানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • বছরের যেকোন সময় তুলসী চারা লাগান যাবে কিন্তু কার্তিক মাসে তুলসী চারা লাগান সবচেয়ে ভালো।
  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গায় তুলসী চারা লাগাতে হবে এবং কাঁটা গাছের সাথে তুলসী চারা লাগানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • তুলসীর পাতা যখনই ব্যবহার করেন না কেন তুলসীর পাতা সকালে তুলে রাখতে হবে। কারণ তুলসীর পাতা কখনও বাসি হয় না।
  • অকারনে তুলসী পাতা ছেঁড়া থেকে বিরত থাকুন।
  • পরিষ্কার হাতে তুলসী পাতা ছিড়ুন। অপরিষ্কার হাতে তুলসী পাতা ছিড়বেন না।
  • রবিবার, একাদশী ও চন্দ্রগ্রহণের দিনে তুলসী পাতা তোলা থেকে বিরত থাকুন।
  • তুলসী পাতা তোলার আগে তুলসী গাছকে প্রণাম করুন।
  • তুলসী পাতা তোলার সময় তুলসী তোলার মন্ত্র উচ্চারণ করুন। মন্ত্রটি হল- মহাপ্রসাদ জননী, সর্ব সৌভাগ্যবর্ধিনী, আধি ব্যাধি হরা নিত্যং, তুলসী ত্বং নমোস্তুতে।

তুলসী পূজার মন্ত্র | তুলসী পূজার নিয়ম

তুলসী পূজার জন্য বেশ কিছু মন্ত্র আছে যা একেকটা একেক কাজে প্রয়োজন হয়। আমরা এখানে তুলসী পূজার বেশ কিছু মন্ত্র সম্পর্কে জানব। এবং সেগুলো কোনটা কোন কাজে ব্যবহার করা হয়, কিভাবে পাঠ করতে হয় তা জানব। চলুন তুলসী পূজার মন্ত্র সম্পর্কে জেনে নেই।

দেবী তুলসীকে প্রসন্ন করার মন্ত্র

প্রতিদিন গোসল করে ভেজা কাপড়ে একটি ঘটিতে পরিষ্কার পানি অথবা গঙ্গাজল নিয়ে এই মন্ত্রটি পাঠ করতে হবে। তাহলে তুলসী মা সবসময় প্রসন্ন থাকবে ও তার আশীর্বাদে অধিক ধনসম্পদ ও মোক্ষ লাভ হবে। মন্ত্রটি হল-
  • ‘নমঃ তুলসী কল্যাণী নমো বিষ্ণুপ্রিয়ে শুভে। নমো মোক্ষপ্রদে দেবী নমঃ সম্পৎপ্রদায়িকে’।

মনকে পবিত্র করার মন্ত্র

পরিষ্কার অবস্থায় একটি ঘটিতে করে পরিষ্কার পানি নিয়ে তার মধ্যে কিছুটা কাঁচা দুধ ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে নিম্নোক্ত মন্ত্রটি পাঠ করুন এবং গাছের গোড়ায় ঢালুন। এতে করে সবসময় মন প্রফুল্ল ও পবিত্র থাকবে। মন্ত্রটি হল-
  • তুলসী পাতু মাং নিত্যং সর্বাপৎভোপি সর্বদা। কীর্তি তাপি স্মৃতা বাপি পবিত্রতি মানবম্।

বাড়ির পরিবেশ পবিত্র করার মন্ত্র

বাড়ির পরিবেশ পবিত্র করতে একটি পরিষ্কার ঘটিতে করে সামান্য কাঁচা দুধ, কেশর ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে মিশ্রণটি তৈরি করে নিম্নোক্ত মন্ত্রটি পাঠ করুন এবং তুলসীর গোড়ায় ঢালুন। এতে করে তুলসী মায়ের কৃপায় সমস্ত বাড়ির পরিবেশ পবিত্র ও শান্তিময় হবে। মন্ত্রটি হল-
  • তুলসী নাপরং কিঞ্চিদ্দৈবতং জগতী তলে। ময়া পবিত্রতো লোকো বিষ্ণুণা বৈষ্ণবো যথা।

কুমারী মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার মন্ত্র

যাদের বিয়ে তাড়াতাড়ি হয় না তাদের অতি দ্রুত বিয়ে হওয়ার জন্য একটি ঘটিতে কিছুটা কাঁচা দুধ, কিছুটা কাঁচা হলুদ বাটা বা হলুদ গুড়া ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো ভাবে মিশিয়ে নিয়ে নিম্নোক্ত মন্ত্রটি পাঠ করতে হবে ও তুলসী তলায় পানি ঢালতে হবে। এতে করে কুমারী মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে সম্পন্ন হবে।
  • তুলস্যাঃ পল্লবং বিষ্ণাঃ শিরস্যারোপতিং কলৌ। আনরাপয়তি সব্বানি শ্রেয়ানি বরমস্তকে।

শিক্ষার্থীদের পুর্ণ বিদ্যালাভের মন্ত্র

শিক্ষার্থীদের পুর্ণ বিদ্যালাভের জন্য একটি ঘটিতে গঙ্গাজল নিয়ে তাতে সামান্য পরিমান গোরোচন ও গব্য ঘি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে সেই পানি শিক্ষার্থী বা তার পরিবর্তে অন্য কেউ নিম্নোক্ত মন্ত্রটি পাঠ করে তুলসী গাছের গোড়ায় পানি ঢাললে তুলসী মায়ের কৃপায় শিক্ষার্থীর বিদ্যালাভে উন্নতি হবে। মন্ত্রটি হল-
  • তুলসী শ্রীর্মহালক্ষ্মীবিদ্যাবিদ্যা যশস্বিনী। ধর্ম্ম্যা ধর্ম্মাননা বৃন্দা দেবদেবমনঃ প্রিয়া।

তুলসী পূজা কেন করা হয় | তুলসী পূজার নিয়ম

অনেক আগে এক ভয়ানক অসুর ছিল যার নাম ছিল শঙ্খচুড়। সেই শঙ্খচুড় তার শক্তিবলে দৈত্যদের রাজা হয়। দেবী তুলসী ছিলের শঙ্খচুড়ের স্ত্রী। দেবী তুলসী তখন ছিলের পরম বিষ্ণুভক্ত। দেবী তুলসী বিষ্ণুভক্ত হওয়ায় তার সতীত্ব ছিল দৃঢ়। তার এই দৃঢ় সতীত্বের শক্তি বারবার যুদ্ধক্ষেত্রে তার স্বামীকে রক্ষা করত। 
একবার দেবতা ও দানবের যুদ্ধে মহেশ্বরের সাথে যুদ্ধ করতে স্বয়ং শঙ্খচুড় উপস্থিত হল। শঙ্খচুড়ের স্পর্ধা দেখে মহেশ্বর রাগে ফেটে পড়লেন এবং শঙ্খচুড়কে প্রহার করলেন। কিন্তু তুলসীর সতীত্বের কারণে মহেশ্বর শঙ্খচুড়ের কোন প্রকার ক্ষতি করতে পারলেন না। আবার এদিকে যদি মহেশ্বর শঙ্খচুড়ের কাছে হেরে যায় তাহলে দানবের কাছে দেবতাদের পরাজয় হবে এবং এই বিশ্বব্রহ্মান্ড আশুরিক শক্তির কবলে পড়বে। তাই এই বিশ্বব্রহ্মান্ড বাঁচাতে মহেশ্বর নিজে বিষ্ণুদেবকে স্বরণ করেন। এবং ভগবান বিষ্ণু সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিজে শঙ্খচুড়ের রূপ ধারন করে দেবী তুলসীর কাছে গেলেন। 

এদিকে আবার দেবী তুলসী ভগবান বিষ্ণুকে স্বরণ করছিলেন যাতে করে তার স্বামী এই অন্যায় যুদ্ধ ক্ষেত্রে ছেড়ে তার কাছে ফিরে আসে। নিজের স্বামীর চিন্তায় মগ্ন দেবী তুলসী ছদ্দবেশী বিষ্ণুকে চিনতে পারলেন না এবং তাকেই নিজের স্বামীরূপে কল্পনা করলেন। অন্য কাউকে স্বামী মনে করার সাথে সাথেই দেবী তুলসীর সতীত্ব নষ্ট হয়ে গেল এবং মহেশ্বর সহযেই শঙ্খচুড়কে বোধ করলেন। 

দেবী তুলসী যখন ভগবান বিষ্ণুকে চিনতে পারলেন তখন তিনি অভিমানে কষ্টে বিষ্ণুকে অভিশাপ দিলেন যে, "ভক্তের সাথে ছলনার জন্য তুমি পাষান হয়ে জন্মিবে প্রভু" এবং দেবী তুলসী আগুনে তার প্রাণ বিসর্জন দিল। বিষ্ণু দেবী তুলসীর এই অভিশাপটি মাথা পেতে নিল এবং দেবী তুলসীকে আর্শীবাদ করল যে, "দেবী তুলসী, তুমি এই পৃথিবীতে তুলসী গাছ হয়ে জন্মাবে এবং সবসময় আমার পূজায় ব্যবহার হবে" ভগবান বিষ্ণুর এই আর্শীবাদে দেবী তুলসীর দেহ ভষ্ম হয়ে তুলসী গাছের জন্ম হয়। এদিকে দেবী তুলসীর অভিশাপের কারণে ভগবান বিষ্ণু শালগ্রাম শিলা বা নারায়ণ শিলা রূপে বিরাজ করে।

এর জন্য ভগবান বিষ্ণুর সকল পূজাতে তুলসী পাতা অপরিহার্য। তুলসী ছাড়া কখনও বিষ্ণু/কৃষ্ণ/নারায়ণ/হরি/শিলা পূজা সম্পূর্ণ হয় না। আর মহেশ্বর শঙ্খচুড়কে বধ করার কারণে শিব পূজায় তুলসী ব্যবহার করা হয় না।

তুলসী পূজা পদ্ধতি | তুলসী পূজার নিয়ম

হিন্দুদের জন্য তুলসী গাছ একটি পবিত্র গাছ এবং তুলসী স্থান পবিত্র স্থান। প্রায় প্রতিটি হিন্দু বাড়িতে তুলসী গাছ আছে এবং প্রতিটি বাড়িতেই তুলসী পূজা করা হয়। হিন্দুরা মনে করেন যে ব্যাক্তি প্রতিদিন নিয়মিত তুলসী গাছে জল দিবে, যত্ন করবে, সে আধ্যাত্নিক যোগ্যতা ও ভগবান বিষ্ণুর ঐশ্বরিক কৃপা লাভ করবে। তুলসী পূজা ও যত্ন করা বাড়ির মহিলাদের দায়িত্ব। প্রতিদিনই তুলসীর পূজা করা যায় বিশেষ করে মঙ্গলবার ও শুক্রবারকে তুলসী পূজার জন্য পবিত্র বলা হয়। তুলসী পূজার পদ্ধতিতে আছে-
  • তুলসী গাছকে পানি দেওয়া।
  • গাছের আশেপাশে বা কাছাকাছি সকল জায়গায় পানি ও গোবর দিয়ে পরিষ্কার করা।
  • তুলসী গাছকে খাবার, ফুল, ধূপ, গঙ্গার জল ইত্যাদি নৈবেদ্য প্রদান করা।
  • দেবতা ও সাধুদের পায়ের কাছে নকশা আঁকা।
  • তুলসী প্রার্থনা ও মন্ত্র পরে গাছকে প্রদক্ষিণ করা।
  • তুলসী পূজা দিনে ২বার করা হয় - সকালে ও সন্ধ্যায়। এছাড়াও তুলসী গাছের কাছে প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বালানো হয়।

তুলসী জলদান মন্ত্র | তুলসী স্নান মন্ত্র

তুলসী জলদান মন্ত্র নিচে দেওয়া হল-
  • (ওঁ) গোবিন্দবল্লভাং দেবীং ভক্তচৈতন্যকারিণীম্ । স্নাপয়ামি জগদ্ধাত্রীং কৃষ্ণভক্তি প্রদায়িনীম্ ॥
অর্থ- ‘তুলসী তুলসী বৃন্দাবন, তুলসী তুমি নারায়ন তোমার মাথায় ঢালি জল, অন্তিমকালে দিও স্থল।’

তুলসী প্রণাম মন্ত্র | তুলসী পূজা করার নিয়ম

তুলসী প্রণাম মন্ত্র নিচে দেওয়া হল-
  • বৃন্দায়ৈ তুলসীদেব্যৈ প্রিয়ায়ৈ কেশবস্য চ। বিষ্ণুভক্তি-প্রদায়িন্যৈ সত্যবত্যৈ নমো নমঃ।

তুলসী প্রদক্ষিণ মন্ত্র | তুলসী পূজার নিয়ম

তুলসী প্রদক্ষিণ মন্ত্র নিচে দেওয়া হল-
  • যানি কানি চ পাপানি ব্রহ্মহত্যাদিকানি চ ৷ তানি তানি প্রণশ্যান্তি প্রদক্ষিণ পদে পদে ৷ 
অর্থাৎ, যখন মানুষ শ্রীমতী তুলসীদেবীকে প্রদক্ষিণ করতে থাকে ,তখন প্রতি পদক্ষেপে তার কৃত সকল পাপকর্ম ,এমন কি ব্র্হ্মহত্যার পাপও পদে পদে বিনষ্ট হয়ে যায় ।

শেষ কথাঃ তুলসী পূজার নিয়ম - তুলসী পূজা করার নিয়ম - তুলসী পূজার মন্ত্র

বন্ধুরা, আজ আমরা তুলসী পূজার নিয়ম - তুলসী পূজা করার নিয়ম - তুলসী পূজার মন্ত্র নিয়ে একটি পোস্ট তৈরি করেছি। আমাদের এই পোস্টটিতে তুলসী পূজার নিয়ম - তুলসী পূজা করার নিয়ম - তুলসী পূজার মন্ত্র, তুলসী পূজা কেন করা হয়, তুলসী পূজা পদ্ধতি, তুলসী জলদান মন্ত্র, তুলসী প্রণাম মন্ত্র, তুলসী স্নান মন্ত্র, তুলসী প্রদক্ষিণ মন্ত্র নিয়ে আলোচনা করেছি।

আশাকরি, আমাদের এই তুলসী পূজার নিয়ম - তুলসী পূজা করার নিয়ম - তুলসী পূজার মন্ত্র, তুলসী পূজা কেন করা হয়, তুলসী পূজা পদ্ধতি, তুলসী জলদান মন্ত্র, তুলসী প্রণাম মন্ত্র, তুলসী স্নান মন্ত্র, তুলসী প্রদক্ষিণ মন্ত্র পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে এবং আপনারা উপকৃত হবেন। এই ধরনের আরও নতুন পোস্ট পেতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন, ধন্যবাদ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url